বিএনপি পার্টি অফিসে হামলা অপারেশন সার্চলাইটের মতই: গ‌য়েশ্বর

স্কাই নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২

ঢাকা: ৭ তারিখে বিএনপি পার্টি অফিসে যে বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছে তা ৭১ সালের ২৫ মার্চ তারিখের পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর অপারেশন সার্চলাইটের মতই ব‌লে মন্তব‌্য ক‌রে‌ছেন বিএন‌পির স্থায়ী ক‌মি‌টির সদস‌্য গ‌য়েশ্বর চন্দ্র রায়।

বুধবার (২১ ডি‌সেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)-এর উদ্যোগে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের অকুতোভয় যোদ্ধা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ও জেটের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ফখরুল আলমসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশে তি‌নি এসব কথা ব‌লেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘কিছু উচ্ছিষ্ট দল ব্যতীত সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি বিএনপিসহ দেশের আপামর জনসাধারণের। বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোতে আগে অনুমতি দিলেও ঢাকাতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ১১ দিন আগে ২৬টি শর্ত যুক্ত করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেওয়া হয় যদিও আমরা পল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে করার অনুমতি চেয়েছিলাম। আমরা সরকার পতনের জন্য নয়, আমাদের নেত্রীর মুক্তি ও নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে অন্যান্য গনসমাবেশের মতো ঢাকার সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকারের কিছু গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে ভুল তথ্য দিয়ে ভিন্ন পথে পরিচালিত করে। অথচ এর আগে পার্টি অফিসের সামনে শত শত কর্মসূচি আমরা পালন করেছি। ১০ তারিখের সমাবেশ বানচাল করার উদ্দেশ্য না থাকলে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে কেন বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করলেন? ৭ তারিখে বিএনপি পার্টি অফিসে যে বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছে তা ৭১ সালের ২৫ মার্চ তারিখের পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর অপারেশন সার্চলাইটের মতই।’

তি‌নি ব‌লেন, ‘দেখা গেল সকল গ্রেপ্তার‌ই অন্তঃসারশূন্য। নয়াপল্টনের ঘটনায় যে মামলা করা হয়, সেখানে ফখরুল ইসলাম এবং আব্বাসের নাম ছিল না কিন্তু তাদেরকে অজ্ঞাত নামার মধ্যে ঢুকিয়ে গ্রেপ্তার করলেন। ফখরুল, আব্বাস তো দেশে অজ্ঞাত না এদেরকে সবাই চেনেন। সীমা লংঘনকারীদের ঈশ্বরও ক্ষমা করেন না। বিএনপি আন্দোলন না করলেও আপনাদের যেতেই হবে, আমি বলতে চাই এনাফ আজ এনাফ। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করেন।’

বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপ‌তি‌ত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, ইন্জিনিয়ার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যব) সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক, ইন্জিনিয়ার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যব)-এর সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমানসহ বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

গ‌য়েশ্বর ব‌লেন, ‘কথায় কথায় গুলি করবেন না, পুলিশকে জনসাধারণের শত্রু বানাবেন না। প্রধানমন্ত্রী, আপনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে বলেন ফরগট মি, ফরগেট মি আমি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিবো। তাহলে আপনার একটা সম্মানজনক এক্সিট হবে। আমাদের ঘোষিত ১০ দফা মেনে নিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা করুন। অন্যথায় জনগণই তার ব্যবস্থা করবে। আমাদের আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে সময় থাকতে ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন দিন।’

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘এখনও সময় আছে আমাদের আটক নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিন। তা না হলে আমরা পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দিব। খুনের মামলার আসামিরা মুক্তি পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে অথচ আমাদের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এখনও মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। যতই হামলা মামলা গ্রেপ্তার হোক না কেন আমরা আন্দোলন থেকে পিছপা হবো না।’

ড্যাবের সভাপতি ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যখন জেগে উঠেছিল তখন ৭ তারিখ বিএনপির পার্টি অফিসে হানা দিয়ে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাসহ শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। স্বৈরাচার সরকার তাদের দালাল দিয়ে টিকে থাকতে চাচ্ছে তাই তৃণমূল বিএনপিকে আদালতের মাধ্যমে নিবন্ধের ব্যবস্হা করেছে। আমরা দুর্বার আন্দোলন করে আমাদের নেতা কর্মীদের মুক্ত করে ছাড়বো।’

ইন্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু বলেন, ‘আমি একটি কথা বলতে চাই সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠে না। আঙ্গুল বাঁকা করতে হবে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া আন্দোলনের ঝর উঠেছে। তাই আপনারা কেন্দ্রীয় নেতারা কর্মসূচি দেন আমরা পেশাজীবী পরিষদের নেতারা আপনাদের পাশে আছি এবং থাকব। সরকার ভেবেছিল ১০ তারিখ তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হবে, সেটা হয়নি কিন্তু তারা এখনো স্যাঙ্কশনের ভয়ে ভীত।’

অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘চোর ডাকাত রাও রাত তিনটার সময় গ্রেপ্তার হয় না। মধ্যযুগীয় কায়দায় ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের মহাসচিবসহ নেতাকর্মীদের রাতের আঁধারে গ্রেপ্তার করেছে। আর বেশি সময় নাই আমরা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে খালেদা জিয়ার সরকার প্রতিষ্ঠা করব। আমরা পেশাজীবীরা রাজপথে আছি এবং শেখ হাসিনাকে বলতে চাই আপনার বাবার অবস্থায় আপনাকেও দেখতে চাই না। আমেরিকা নয় এ দেশের জনগণ আপনাকে সেন্সর দিবে। দেশের সব সীমানায় পাহারা আছে আপনাকে পালাতে দেওয়া হবে না।’

সভাপতির বক্তব্যে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজকের এই প্রতিবাদ সভায় আগত প্রধান অতিথিসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ৭ ডিসেম্বর বিএনপির পার্টি অফিসে যে বর্বরোচিত হামলা হয়েছে, বোমা নাটক সাজানো হয়েছে সাংবাদিকদের মাধ্যমে তা সারা বিশ্বের লোক দেখেছে। প্রেসক্লাব থেকে আমাদের পেশাজীবী নেতা ফখরুল আলমকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের চব্বিশ হাজার নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করে রাখা হয়েছে। জনগণের ঢেউ দেখে এখন তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই, এজন্য তারা আইন আদালতের কোন তোয়াক্কা না করে জুলুম অত্যাচার শুরু করেছে। আবার আদালতের মাধ্যমে তৃণমূল বিএনপিকে অনুমোদন দিয়ে নতুন পায়তারা শুরু করেছে। খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল সবাই জেলে থাকলেও একজনের পর আরেকজন নেতা দাঁড়িয়ে যাবে, সরকারের পতন হবেই হবে।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2021 Skynews24.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com