সারাদেশে ৫ জেলায় বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও হবিগঞ্জ জেলায় বজ্রপাতে এসব মৃত্যু ঘটনা ঘটে। এছাড়া বজ্রপাতে আরও বেশ কয়েকজন আহত হন।
কুমিল্লা
কুমিল্লায় বজ্রপাতের পৃথক দুটি ঘটনায় দুই কৃষক ও দুই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ও দুপুরের দিকে এসব ঘটনা ঘটে। বজ্রপাতে নিহতদের মধ্যে দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক এবং দুইজন স্কুলছাত্র রয়েছে।
সকালে সাড়ে ১০টার দিকে মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের পাশের মাঠে বজ্রপাতে মারা যান দুই ব্যক্তি। তারা হলেন- দেওড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে জুয়েল ভূঁইয়া (৩৫) ও কোরবানপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়া (কালীবাড়ি) এলাকার মৃত বীরচরন দেবনাথের ছেলে নিখিল দেবনাথ (৬০)।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, ওই সময় তারা মাঠে কাজ করছিলেন। হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম (মেম্বার) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, আমরা স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়েছি। তাদের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এছাড়া একই দিনে দুপুরের দিকে বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগাছা গ্রামে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছে দুই স্কুলছাত্র। নিহতরা হলেন- ঐ এলাকার মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৩) এবং একই এলাকার আব্দুল বারেক মিয়ার নাতি সায়মন হোসেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুজনেই বড় হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল। হালকা মেঘলা আবহাওয়ায় তারা মাঠে ঘুড়ি উড়াচ্ছিল। আকস্মিক বজ্রপাতে মারাত্মক আহত হলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কিশোরগঞ্জ
এদিকে, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলায় ধান কাটার সময় বজ্রপাতে দুইজন নিহত হয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলার কলমা ইউনিয়ন ও খয়েরপুর আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের হাওরে এসব বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- উপজেলার কলমা ইউনিয়নের হালালপুর গ্রামের মৃত যতিন্দ দাসের ছেলে ইন্দ্রজিত দাস (৩০) ও খয়েরপুর আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের খয়েরপুর গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে স্বাধীন মিয়া (১৪) এবং মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের রানীগঞ্জ গ্রামের মৃত আশ্রব আলীর স্ত্রী ফুলেছা বেগম।
পুলিশ জানায়, ইন্দ্রজিত দাস সকালে হালালপুর গ্রামের পাশে হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে মারা যায়। অন্যদিকে, খয়েরপুরের হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই স্বাধীন মিয়ার মৃত্যু হয়।
এছাড়া সকালে ফুলেছা বেগম মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের রানীগঞ্জ গ্রামের বাড়ির পাশে খলায় ধানের কাজ করছিলেন। তখন বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান।
সুনামগঞ্জ
অপরদিকে, সুনামগঞ্জের শাল্লায় বজ্রপাতে রিমন তালুকদার নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিমন তালুকদার (২২) শাল্লা কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো সোমবার সকালে শাল্লার বুড়িগাঙ্গাল হাওরে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যায় রিমন। এসময় হঠাৎ বৃষ্টিপাত শুরু হলে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার আগে বজ্রপাতে রিমন তালুকদার ও তার সঙ্গে নিয়ে যাওয়া একটি গরুর মৃত্যু হয়।
নেত্রকোণা
এছাড়া নেত্রকোণার কলমাকান্দায় আকস্মিক বজ্রপাতে দিদারুল ইসলাম নামে কওমি মাদরাসার এক শিক্ষক ও মদন উপজেলায় আরাফাত মিয়া (১০) নামে এক মাদরাসার ছাত্রের মৃত্যু হয়।
সোমবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের তিয়শ্রী গ্রামে নিজ বাড়ির সামনেই বজ্রপাতে মৃত্যু হয় আরাফাত মিয়ার। সে উপজেলার তিয়শ্রী গ্রামের আব্দুস ছালামের ছেলে।
অপরদিকে, কলমাকান্দা থানার ওসি মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেন বলেন, রবিবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে আকস্মিক বজ্রপাতে মারাত্মক আহত হোন মাদরাসা শিক্ষক দিদারুল। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
হবিগঞ্জ
এছাড়া হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং এর হাওরে বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছেন। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে ঝড়বৃষ্টির সময় এই ঘটনা ঘটে।
জেলার ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আজাদুর রহমান জানান, সোমবার সকালে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার আড়িয়ামুগুর গ্রামের কালবাসী দাসশর ছেলে দূর্বাসা দাশ (৩৫) ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। আহত হয় তার ভাই ভূষণ দাশ (৩৪) ও বোন সুধন্য দাশ (২৮)।
এছাড়াও বজ্রপাতে বানিয়াচং উপজেলার বাগহাতা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে বায়েজিদ মিয়া (১৩) আহত হয়।