শিরোনাম

পরিবর্তন হতে পারে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের আকার

স্কাই নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

আমাদের গ্রহের অভ্যন্তরীণ কেন্দ্র স্বতন্ত্রভাবে ঘোরে। যদি এই গতি না থাকত তাহলে পৃথিবী মৃত গ্রহে পরিণত হতো। ঠিক মঙ্গলের মতো। কয়েক বিলিয়ন বছর আগে মঙ্গল গ্রহও তার চৌম্বক ক্ষেত্র হারিয়ে ফেলে। এতে করে গ্রহটি অনুর্বর, শুষ্ক ও নিষ্প্রাণ হয়ে যায়।

বিগত ২০ বছরে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের আকার পরিবর্তিত হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর কেন্দ্রের আকৃতি সাধারণত বলের মতো মনে করা হয়। কিন্তু অধ্যাপক জন ভিডালের নেতৃত্বে এক গবেষণায় দেখা গেছে, কেন্দ্রের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে কোথাও কোথাও ১০০ মিটার বা তার থেকে বেশি বিকৃত হতে পারে। এই গবেষণাটি নেচার জিওসায়েন্স নামক বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

পৃথিবীর কেন্দ্র আমাদের গ্রহের প্রাণকেন্দ্র, যা চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে জীবনকে রক্ষা করে।

আমাদের গ্রহের অভ্যন্তরীণ কেন্দ্র স্বতন্ত্রভাবে ঘোরে। যদি এই গতি না থাকত তাহলে পৃথিবী মৃত গ্রহে পরিণত হতো। ঠিক মঙ্গলের মতো। কয়েক বিলিয়ন বছর আগে মঙ্গল গ্রহও তার চৌম্বক ক্ষেত্র হারিয়ে ফেলে। এতে করে গ্রহটি অনুর্বর, শুষ্ক ও নিষ্প্রাণ হয়ে যায়।

বিজ্ঞানীরা জানান, পৃথিবীর কেন্দ্রের যে অংশের উত্তপ্ত তরল ধাতু বাইরের কেন্দ্রের সংস্পর্শে এসেছে সেই অংশেরই আকৃতি পরিবর্তন হয়েছে। বিজ্ঞানীরা মূলত পৃথিবীর ঘূর্ণনের তুলনায় অভ্যন্তরীণ কেন্দ্র গতি কেন কমে গিয়েছিল তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিলেন। যদিও পর ২০১০ সালে আবার গতি বৃদ্ধি পেয়েছিল।

পৃথিবীর কেন্দ্রে থাকা চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীকে রক্ষার কাজ করে। এটি দুর্বল বা বন্ধ হয়ে যাবে কিনা তা বোঝার জন্য কেন্দ্র কীভাবে কাজ করে তা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের গ্রহের অভ্যন্তরীণ অংশ এখনো অনেক রহস্যময়। পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে কেন্দ্র প্রায় চার হাজার মাইল গভীরে। বিজ্ঞানীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও এখনো সেখানে পৌঁছাতে সক্ষম হননি।

তাই এই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করা কিছু গবেষক ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট আঘাতের তরঙ্গ পরিমাপ করেন, যেগুলো পৃথিবীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই তরঙ্গগুলো কীভাবে ভ্রমণ করে, তা থেকে বোঝা যায় তারা কোন ধরনের উপাদানের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে, যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রও অন্তর্ভুক্ত। এটি আমাদের পায়ের নিচে লুকিয়ে থাকা পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠনের একটি চিত্র আঁকতে সাহায্য করে।

নতুন বিশ্লেষণে ১৯৯১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে একই স্থানে বারবার হওয়া ভূমিকম্প থেকে সৃষ্ট ভূকম্পন তরঙ্গের প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, কীভাবে অভ্যন্তরীণ কেন্দ্র সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিজ্ঞানী অধ্যাপক জন ভিডালে এই গবেষণায় আরো প্রমাণ পেয়েছেন, ওই সময়কালে অভ্যন্তরীণ কেন্দ্র ২০১০ সালের দিকে ধীরগতিতে ঘুরছিল। সেই সঙ্গে তার গবেষক দলটি কেন্দ্রের আকৃতি পরিবর্তনেরও প্রমাণ পেয়েছে। এটি অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ কোরের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ঘটছে বলে মনে হয়, যেখানে অভ্যন্তরীণ কোরের তাপমাত্রা গলনাঙ্কের প্রায় কাছাকাছি। বহিঃস্থ কোরের তরল ধাতব প্রবাহ ও অসম মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে এখানে বিকৃতি সৃষ্টি হতে পারে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তরল বহিঃস্থ কোর জমে কঠিন অভ্যন্তরীণ কোরে পরিণত হচ্ছে, তবে এটি সম্পূর্ণ কঠিন হতে কয়েক বিলিয়ন বছর সময় লাগবে। তখন পৃথিবীতে জীবন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তবে ওই সময়ের আগেই হয়ত পৃথিবীকে সূর্য গ্রাস করে নেবে।

অধ্যাপক ভিডালের মতে, বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর কেন্দ্রের রহস্য সমাধানে কাজ করছেন। তিনি বলেন, বিজ্ঞানে আমরা কোনো বিষয় পুরোপুরি না বোঝা পর্যন্ত অনুসন্ধান চালাই। এই আবিষ্কার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলবে না, তবে আমরা পৃথিবীর কেন্দ্রের ঘটনা বুঝতে চাই।

তবে অধ্যাপক ভিডালে এই গবেষণার ফলাফলকে অতিরঞ্জিত না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমরা শতভাগ নিশ্চিত নই যে আমরা এই পরিবর্তনগুলো সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করছি কি না। বিজ্ঞান সবসময় পরিবর্তনশীল, আমি নিজেও আগে ভুল প্রমাণিত হয়েছি।

সূত্র: বিবিসি

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2021 Skynews24.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com