ব্রিকসে যোগদানে বাংলাদেশের কী লাভ-কী ক্ষতি?

স্কাই নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০২৩

ঢাকা: চীন, রাশিয়া, ভারতসহ পাঁচ দেশের অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসে বাংলাদেশের যোগ দেয়া নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। বৈশ্বিক রাজনীতির মেরুকরণের পাশাপাশি সামনে আসছে অর্থনীতির বিভিন্ন লাভ-ক্ষতির হিসাবও। অর্থনীতি গবেষকরা বলছেন, মূলত একটি বহুপক্ষীয় বিশ্বের নতুন মেরুকরণের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্রিকসে যোগ দেয়ার আশা করছে। এতে দেশগুলোর মধ্যে বিনিয়োগের যথেষ্ট সম্ভাবনাও দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। যা অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ খুলে দিতে পারে। তবে চীন ও রাশিয়ার জোটে যোগ দিলে পশ্চিমাদের আড় চোখে পড়ার ঝুঁকি বাংলাদেশের কতটা থাকবে- সে প্রশ্নও অনেকের।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশের বাজার মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ নির্ভর। বিনিয়োগও ওইসব দেশ থেকেই বেশি আসে। তাই জোটে যোগ দিলে বাংলাদেশের অর্থনীতি পশ্চিমাদের চাপে পড়তে পারে। সুতরাং জোটে যোগ দেয়ার আগে লাভ-ক্ষতির হিসাবটাও ঠিক মতো করার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।

তারা বলছেন, ব্রিকস বাংলাদেশের রপ্তানি নয়, মূলত আমদানির উৎস। আর বাংলাদেশ মূলত ব্রিকসের দুই দেশ ভারত ও চীনের বড় রপ্তানি বাজার।

তাই ব্রিকসে যোগ দিয়ে ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার আশা নিষ্ফলও হতে পারে।

বেশ কিছুদিন ধরেই ব্রিকসে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কথাবার্তা চলছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এ নিয়ে একাধিকবার কথা বলেছেন। আগামী আগস্টে ব্রিকসের সদস্য হওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ। এমন একটি সময়ে বাংলাদেশ ব্রিকসে যোগ দিতে যাচ্ছে, যখন বাংলাদেশের বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নতুন একটি ভিসানীতি দেয়া হয়েছে।

টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক লেখক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব মনে করেন, ব্রিকস থেকে সুফল তোলার সবচেয়ে বড় বাধা অর্থনৈতিক বৈষম্য। বাংলাদেশের বর্তমান বাণিজ্যঘাটতি, যেখানে রপ্তানির চেয়ে আমদানি অনেক বেশি, সেখানে ব্রিকসের সুবিধা আদায় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এর ফলে দেশের সীমিতসংখ্যক পণ্যের রপ্তানি সক্ষমতা গ্রুপের বৃহত্তর অর্থনীতির সঙ্গে মূল্য প্রতিযোগিতাকে কঠিন করে তুলতে পারে। পাশাপাশি আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়াতে পারে।

একইসঙ্গে দেশের সম্ভাব্য বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই গবেষক বলেন, অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতির হিসাব বাংলাদেশ খুব একটা গুরত্বসহকারে করছে না বলে মনে করি। কেননা অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতি পরিমাপের জন্য লিপিবদ্ধ একাডেমিক কিংবা বেসরকারি গবেষণা সংস্থা দিয়ে কিংবা যৌথ স্টাডি করা হয়নি।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বাংলাদেশ যদি সত্যি সত্যিই বৈশ্বিক কিংবা আঞ্চলিক সংযোগকে গুরুত্ব দিত, তাহলে আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্য রিজিওনাল কম্প্রিহেন্সিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপে (আরসিইপি) যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে দেখতাম। কেননা, আরসিইপি চুক্তি পুরোপুরি কার্যকর হলে বাংলাদেশ ভিয়েতনামের সঙ্গে তীব্র রপ্তানি প্রতিযোগিতায় পড়বে।

বাংলাদেশ এখনো কারও সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ করতে পারেনি। আরসিইপি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হলে শুল্ক কমাতে হবে এবং তাতে স্থানীয় উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে- এই আশঙ্কায় ভারত নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়। বোঝাই যাচ্ছে, ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য বিষয়ে উদারতার অভাব আছে। তদুপরি চীনে ৯৭ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুবিধা এখনই পাচ্ছে বাংলাদেশ, ফলে চীন থেকে নতুন কোনো বাণিজ্য সুবিধা আসার মতো নেই। ব্রিকসের অপরাপর দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক সীমিত।

তিনি বলেন, বড় সমস্যা ঋণের উদ্বেগ। ব্রিকসে যোগদানের ফলে বাংলাদেশের মোট বিদেশি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। যদি উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য ঋণের ওপর খুব বেশি নির্ভর করে বা ব্রিকসের আর্থিক বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণের শর্তে অধিক ঋণ নিয়ে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পারে, তখন ঋণের স্থায়িত্ব এবং পরিষেবা দীর্ঘ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে।

মা:জ:

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2021 Skynews24.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com