ঢাকা: দেশে ডলার নিয়ে চলছে অস্থিরতা। কমেছে টাকার মান। একাধিকবার ডলারের দাম বাড়ানোর পরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সঙ্গে ত্রি-পক্ষীয় বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখানে দেশে এক রেটে ডলার বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়।
ডলারের এই এক রেট বাস্তবায়নে বাফেদা ও এবিবি যৌথভাবে কাজ করবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে সব এক্সচেঞ্জ হাউজে ডলারের রেট হবে অভিন্ন। যা দেশের সব অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংক মেনে চলবে। তবে তার আগে বাফেদা ইন্টার ব্যাংক রেট (আন্তঃব্যাংক রেট হার) প্রস্তাব পাঠাবে। এরপর পাঠানো প্রস্তাব পর্যালোচনা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিষয়টিতে কী সিদ্ধান্ত হবে তা আগামী রবিবারের (২৯ মে) মধ্যে জানা যাবে বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার (২৬ মে) বাফেদা, এবিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রি-পক্ষীয় সভা শেষে এসব কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই মুখপাত্র।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে লিকুইডিটি (ডলার বিক্রি) সাপোর্ট দেওয়া অব্যাহত রাখবে। রফতানিকারক ব্যাংকের মাধ্যমে ডিসকাউন্টসহ রফতানিমূল্য ওই ব্যাংকেই বিক্রি করবে।
বৃহস্পতিবারের এই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে বাফেদা ও এবিবির চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন ব্যাংকের এমডি ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ডলারের বাজারে অস্থিরতা নিরসনে গত ১৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এক চিঠি দেয়। চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দেয় বাফেদা। সংগঠনটির প্রস্তাবে মধ্যে অন্যতম হলো- বৈধভাবে পাঠানো রেমিট্যান্সের প্রণোদনা আড়াই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ শতাংশ করা, বাজারের চাহিদা বিবেচনা করে ডলার সরবরাহ করা, বাজারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে ডলার ক্রয়-বিক্রয়ে আন্ত-ব্যাংক বিনিময় হার পুনঃনির্ধারণ করা। আর সব অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংক বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে ‘একক বিনিময় হারে’ লেনদেন করবে এবং সেই হার আন্ত-ব্যাংকের মধ্যে লেনদেনর থেকে কমপক্ষে শূন্য দশমিক এক শতাংশের কম হবে। এই একক বিনিময় হার কঠোরভাবে তদারকি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাফেদার এসব প্রস্তাবের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাফেদার মধ্যে আজ বৈঠক হয়।
চিঠিতে বাফেদার প্রস্তাবে আরও বলা হয়, এডি ব্যাংকগুলো রপ্তানির ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী কর্তনমূল্যের সুযোগ নিশ্চিত এবং রপ্তানির কাগজপত্র যাচাই করবে। এছাড়া একমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানির এলসি বিল ও সরকারি বাধ্যতামূলক পাওনা পরিশোধে বৈদেশিক মুদ্রার বাড়তি চাহিদার তারল্য সরবরাহ করবে। আর রাষ্ট্রয়াত্ব এডি ব্যাংকগুলো নিজস্ব উৎস থেকে কেবল সরকারের বাণিজ্য ও বাধ্যতামূলক পাওনা বড়জোর তিন মাসের জন্য পরিশোধ করবে। তবে এসব ব্যাংক সরকারের আন্তঃব্যাংক বাজার পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রার উৎস হিসেবে ব্যবহার হবে না।
বাফেদার এক সদস্য জানান, দেশে এখন আমদানির জন্য যে পরিমাণ অর্থ বা ডলার খরচ হচ্ছে, তা রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে তা মিটছে না। এর ফলে সংকট তৈরি হয়েছে। এজন্য বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যে পরিমাণ ডলার বিক্রি করছে, সেটি চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। ফলে প্রতি মাসে প্রায় ১০০ কোটি ডলার ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে খোলাবাজারে ডলারের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কিছুটা কমে এসেছে। রাজধানীতে আজ প্রতি ডলার ৯৭-৯৮ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক ৮৮ টাকা ৯০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে খোলাবাজারে ডলারের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কিছুটা কমে এসেছে। রাজধানীতে বুধবার (২৫ মে) প্রতি ডলার ৯৮ থেকে ৯৯ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে ৮৮ টাকা ৯০ পয়সা দরে।