পুতিন জানেন না সামনে কী আসছে: বাইডেনের হুমকি

স্কাই নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ, ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধে সফলতা পেলেও এই সামরিক অভিযানের জন্য তাকে দীর্ঘ মেয়াদে চড়া মূল্য দিতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১ মার্চ) রাতে প্রথম স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে বাইডেন এই হুমকি দেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন ও জনগণের উদ্দেশে দেওয়া এই ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে হুমকি দিয়ে বাইডেন বলেন, ‘সামনে কী আসছে, সে সম্পর্কে তার (পুতিন) কোনো ধারণাই নেই। ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা পাঠানোর জন্য বিশ্ব তাকে একঘরে করেছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে, যা তার অর্থনৈতিক শক্তি ধসিয়ে দেবে এবং সামরিক বাহিনীকে দুর্বল করবে।’

পুতিনকে ‘স্বৈরশাসক’ বলেও অভিহিত করেছেন বাইডেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার একজন স্বৈরশাসক আরেকটি দেশে হামলা চালাচ্ছেন, যার মূল্য দিতে হচ্ছে পুরো বিশ্বকে। কিন্তু গণতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের লড়াইয়ে এ মুহূর্তে গণতন্ত্রেরই উত্থান ঘটছে এবং গোটা বিশ্ব স্পষ্টতই শান্তি ও নিরাপত্তার পক্ষ নিয়েছে।’

বাইডেন আরও বলেন, ‘ইতিহাস থেকে আমরা শিখেছি–আগ্রাসনের জন্য যখন স্বৈরশাসকদের মূল্য দিতে হয় না, তারা আরও বিশৃঙ্খলার কারণ হয়। তারা আগাতে থাকে। আমেরিকা এবং বিশ্বের জন্য হুমকি বেড়েই চলেছে। সেকারণেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে ন্যাটো জোট গঠন করা হয়। আরও ২৯ দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও এর সদস্য। এটা মনোযোগের দাবি রাখে। আমেরিকান কূটনীতি মনোযোগের দাবি রাখে।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘পুতিনের যুদ্ধ পূর্বনির্ধারিত এবং উস্কানিহীন। তিনি কূটনীতির উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি ভেবেছিলেন পশ্চিম এবং ন্যাটো জবাব দেবে না। আর তিনি ভেবেছিলেন আমাদের দেশে বিভক্তি তৈরি করতে পারবেন। পুতিন ভুল ছিলেন। আমরা প্রস্তুত।’

বাইডেন আরও বলেন, ‘পুতিন সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি যদি যুদ্ধক্ষেত্রে সফলতা পেয়েও যান, তাহলেও তাকে দীর্ঘমেয়াদে চড়া মূল্য দিয়ে যেতে হবে।’

ভাষণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞারও ঘোষণা দেন বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় রাশিয়ার উড়োজাহাজ চলাচল নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে বেকায়দায় ফেলতে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, তারা প্রযুক্তি খাতে রাশিয়ার প্রবেশাধিকার কেড়ে নিচ্ছেন। এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে সামনের বছরগুলোতে রাশিয়ার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কমে যাবে। রাশিয়ার সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়বে।

ভাষণের আগে মঙ্গলবার সকালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন বাইডেন। তখন ইউক্রেনে মার্কিন সেনাদের সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য বাইডেনকে অনুরোধ করেন জেলেনস্কি। তবে ইউক্রেন যুদ্ধে মার্কিন সেনা পাঠানো হবে না জানিয়ে বাইডেন বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, ইউক্রেনে রুশ সেনাদের সঙ্গে মার্কিন সেনারা সংঘাতে জড়ায়নি এবং কখনো এ সংঘাতে জড়াবে না।’ ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে ইউরোপে মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হয়নি, বরং পুতিন পশ্চিমে অগ্রসর হতে থাকায় ন্যাটো মিত্রদের রক্ষায় মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, প্রায় দুই মাস ধরে ইউক্রেন সীমান্তে ২ লাখ সেনা জড়ো করে রাশিয়া। রাশিয়ার সেনা মোতায়েন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বারবার সতর্কতা দিয়েছিল; কিন্তু বরাবরই রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে।

এরপর গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন।

ছয় দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ যুদ্ধের সপ্তম দিন। রাজধানী কিয়েভ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে রুশ সেনারা। এ হামলা শুরু পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2021 Skynews24.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com