প্রশাসনে জামায়াতপন্থীদের প্রভাব নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ

স্কাই নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রশাসন ও ভোটগ্রহণ ব্যবস্থায় জামায়াতপন্থীদের প্রভাব বাড়ছে— এমন তথ্যের ভিত্তিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটির অভিযোগ, আমলাতন্ত্র থেকে শুরু করে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল গঠন পর্যন্ত নানা স্তরে জামায়াত-ঘনিষ্ঠদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, যা একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।

গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে এমন সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। বৈঠক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিএনপি বলছে, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশে প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে যাদের তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে, তাদের বড় অংশই অতীতে ছাত্রশিবির করতেন অথবা জামায়াতের সঙ্গে মতাদর্শিকভাবে যুক্ত। এ পরিস্থিতিতে, দলটি নিরপেক্ষ প্রশাসন ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে।

ইসির চিঠি ও বিএনপির প্রতিক্রিয়া: জানা গেছে, চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুতের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এজন্য সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ব্যাংক-বীমা খাত থেকেও তালিকা সংগ্রহের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিএনপির অভিযোগ, এসব প্যানেল তৈরিতে যাদের নির্বাচন করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে একটি বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকজনের আধিপত্য স্পষ্ট। জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে এই ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে শিগগিরই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসবে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে এই প্রতিনিধি দল গঠন করা হচ্ছে বলে সভা সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপি বলছে, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে সাম্প্রতিক নিয়োগ ও রদবদলে একটি দল ও মতাদর্শকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টার কর্মকাণ্ডও নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তুলছে।

স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বৈঠকে বলেন, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জামায়াতসহ কয়েকটি দলের নেতারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং প্রভাব খাটাচ্ছেন। অথচ বিএনপির পক্ষ থেকে সচিবালয়ে উপস্থিতি ও যোগাযোগ কম দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে বিএনপির আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন তিনি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে জামায়াতপন্থী গোষ্ঠীর দাবির প্রতিফলন হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির দাবি, এই সিদ্ধান্ত বিএনপিকে কোণঠাসা করতেই নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, ৫ আগস্টের পর প্রশাসনে যেসব রদবদল হয়েছে, তাতে সরকারি আমলাতন্ত্রে জামায়াত ও সরকার-ঘনিষ্ঠদের নতুন করে বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করে দলটি।

বিএনপির নেতারা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত নিজেকে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে পরিচালনা করা, যাতে করে কেউ তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে। বিশেষ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছে দলটি।

নির্বাচন সামনে রেখে গণসংযোগ প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ে প্রচার-প্রচারণায় ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছে দলটি। এ ক্ষেত্রে প্রচারণায় কীভাবে আরও গতি আনা যায়, দলের মিডিয়া সেল ও কমিউনিকেশন সেলকে কীভাবে আরও সক্রিয় করা এবং দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাজে লাগানো যায়, সেটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সামাজিক মাধ্যমে নানামুখী অপপ্রচার রোখা এবং নতুন নতুন ন্যারেটিভের মাধ্যমে এসব অপপ্রচার মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় ‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরে অংশ নেবে বিএনপির প্রতিনিধি দল। দলটির পক্ষ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ স্বাক্ষর করবেন।

এছাড়াও বৈঠকে বিভিন্ন আসনে দলের একাধিক সম্ভাব্যপ্রার্থী এবং তাদের বাদনুবাদের বিষয়টি ভালোভাবে দেখা উচিত বলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে পরামর্শ দেন নেতারা। এমনটা চলতে থাকলে এর সুযোগ অন্য রাজনৈতিক দল নিতে পারে বলে মনে করেন তারা।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2021 Skynews24.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com