আর্থিক সংকটের মধ্যেই নিয়ম ভেঙে ডাকসু ভবনে বসছে ৯ লাখ টাকার এসি

স্কাই নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৫

গবেষণা, আবাসন ও শ্রেণিকক্ষ সংকটে ভুগছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পার্টটাইম শিক্ষকদের সম্মানিও দেওয়া যাচ্ছে না সময়মতো। তবু এমন সংকটের মধ্যেই কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে ৯ লাখ টাকায় ৯টি এসি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন—তাও আবার নিয়ম ভেঙে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ নিজেই এই অনুমোদনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে রাজস্ব বাজেট থেকেই এসি বসানোর অনুমোদন দেওয়া হয়। সে সময় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম বিদেশে ছিলেন। তার অনুপস্থিতিতে দায়িত্বে থাকা উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ ফাইলটি ফরওয়ার্ড করেন। পরে দেশে ফিরে এসে অধ্যাপক জাহাঙ্গীর জানান, তার অনুপস্থিতিতে এমন অনুমোদন দেওয়া ‘অযৌক্তিক’ এবং এটি হলে তিনি ‘অবশ্যই প্রশ্ন তুলতেন।’

তার ভাষ্য, “সবকিছু জবাবদিহির মধ্যে থাকা উচিত। আমি থাকলে অবশ্যই জিজ্ঞাসা করতাম, কীভাবে অনুমোদন হলো।”

অধ্যাপক মামুন আহমেদ জানান, তিনি কেবল রুটিন কাজ হিসেবে ফাইলটি প্রেরণ করেছেন, অনুমোদন দেননি। তার ভাষায়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সংকটের মধ্যে শিক্ষার উন্নয়ন হলে আমি উদার, কিন্তু ‘ফ্যান্সি’ কিছু দিতে পারি না।”

প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, শুরুতে ভিসি অনুমোদন দিতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম একাধিকবার ফোন করে চাপ দেওয়ায় পরে উপাচার্য নিজেই আবার ফাইল এনে অনুমোদন দেন।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ভিপি বলেন, “ডাকসু ভবনে বসারই জায়গা ছিল না। শুধু কাজের পরিবেশ তৈরি করতে বলেছি। এসির জন্য আলাদা কিছু বলিনি।”

সরকারি ক্রয় বিধিমালা অনুযায়ী, কেবল জরুরি বা অপ্রাপ্য পণ্যের ক্ষেত্রেই সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) ব্যবহার করা যায়। এসি তার মধ্যে পড়ে না, তবুও পুরো প্রকল্পেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের বিদ্যুৎ শাখার কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, “ডাকসু থেকে চাওয়ার পর প্রশাসন অনুমোদন দেয়। ‘গ্রি’ ব্র্যান্ডের ৯টি এসি বসানো হচ্ছে।”

চলতি বাজেটে ডাকসুর জন্য বরাদ্দ ছিল ৩০ লাখ টাকা। হিসাব পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, এর মধ্যে ভবনের সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনে ইতিমধ্যে ব্যয় হয়েছে ২৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা।

প্রকৌশল দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৯টি এসির জন্য খরচ হচ্ছে ৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা। এছাড়া ও সাউন্ড সিস্টেম: ৭১ হাজার, পানির ফিল্টার: ৩৮ হাজার ৫০০, পর্দা ও আসবাব: ৪ লাখ, শৌচাগার উন্নয়ন: ৩.৫ লাখ, ওয়ার্কস্টেশন: ২.৭ লাখ, রং, সংস্কার: ২.৫ লাখ, সাইনবোর্ড, ক্রোকারিজ ও অন্যান্য: ৮৩ হাজারসহ সব কটি খরচই হয়েছে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে।

ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এইচ এম মোশারফ হোসেন বলেন, “এসি বসানোর বিষয়ে কোনো ফাইল আমার মাধ্যমে আসেনি, সরাসরি প্রশাসন করেছে।”

ডাকসুর জিএস এস এম ফরহাদ বলেন, “আমরা সংস্কার তদারকি করেছি ঠিকই, কিন্তু বিলাসিতা চাইনি। ঘাটতি বাজেটের মধ্যেও আমরা নিজ উদ্যোগে সিসিটিভি বসিয়েছি। প্রকৌশলীরা নতুন কেনার কথা বললেও আমরা পুরোনো ব্যবহার করেছি।”

উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ বলেন, “আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। যদি অনুমোদনের কোনো প্রাধিকারের বিষয় থাকে, যাচাই করব।”

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2021 Skynews24.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com