স্বাস্থ্যের মাফিয়া মিঠু কারাগারে, রিমান্ড ও জামিন শুনানি ১৮ সেপ্টেম্বর

স্কাই নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

স্বাস্থ্য খাতে ‘সিন্ডিকেট করে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারে’ জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার আলোচিত ঠিকাদার ও মাফিয়া মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

তার পক্ষে জামিনের আবেদন এবং দুদকের করা ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন শুনতে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করে দিয়েছেন ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়া।

মিঠুর বিরুদ্ধে ৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে বুধবার মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মো. সাইদুজ্জামান। এরপর বুধবার রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে মিঠুকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন দুদকের উপসহকারী পরিচালক জাকির হোসেন।

দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর দেলোয়ার জাহান রুমি রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। অন্যদিকে মিঠুর আইনজীবী শফিকুল ইসলাম রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, “একটি কুচক্রী গ্রুপ তাকে ধ্বংস করতে মামলা করেছে। ২০১৫ সালেও দুদক তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেছিল। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তার অব্যাহতি চেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এই আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমলে গ্রহণ করেন।”

মিঠুর আইনজীবী বলেন, “তিনি ২০১৭ সাল থেকে আমেরিকায় থাকেন। তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ব্যাড ইনটেনশন থাকলে তিনি দেশে ফিরতেন না। তার স্ত্রীও আমেরিকায় থাকেন, ক্যান্সারে আক্রান্ত। দেশপ্রেম থাকার কারণে কিন্তু তিনি দেশে ফিরেছেন। অন্যায় করলে তো তিনি দেশে ফিরতেন না। এটা দুরভিসন্ধি মামলা। তার রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করছি।”

আগের মামলার তথ্য তুলে ধরে প্রসিকিউটর দেলোয়ার জাহান রুমি বলেন, “আগের মামলা ছিল সম্পদের তথ্য গোপনের। আর এই মামলা অবৈধ সম্পদ অর্জনের। অবৈধ সম্পদ আছে বলেই তার বিরুদ্ধে মামলা। তার রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।” উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে রিমান্ড ও জামিনের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ১৮ সেপ্টেম্বর ধার্য করে মিঠুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

দুদকের নথিতে বলা হয়, লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইস ও টেকনোক্র্যাট নামের কোম্পানির মালিক মো. মোতাজ্জেরুল ইসলাম (মিঠু) কৃষি জমি কেনা, জমি লিজ, প্লট, ফ্ল্যাট ও বাড়ি নির্মাণের মাধ্যমে মোট ১৮ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেন।

এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ার ও বিনিয়োগ, গাড়ি ক্রয়, ব্যাংক হিসাবের স্থিতি, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী মিলিয়ে তার আরও ৫৭ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার ২৩৮ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৫ কোটি ৮৫ লাখ ৩১ হাজার ৭৩৮ টাকা।

এছাড়া মিঠুর নামে পারিবারিক ব্যয়ের পরিমাণ পাওয়া গেছে ৭১ কোটি ৪৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৩৪ টাকা। অর্থাৎ পারিবারিক ব্যয়সহ তার মোট সম্পদ ও ব্যয়ের হিসাব দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৭ কোটি ৩০ লাখ ৪৬ হাজার ১৭২ টাকা।

দুদক বলছে, ব্যবসা, বাড়িভাড়া, কৃষি আয়, বেতন-ভাতা, ফার্মের অংশ, ব্যাংক সুদ, নিরাপত্তা জামানতের সুদ এবং বৈদেশিক রেমিটেন্স থেকে মোতাজ্জেরুল ইসলামের বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে ৭১ কোটি ৪৯ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩৫ টাকা।

এই হিসাব করে দুদক বলছে, মিঠু ‘জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ’ প্রায় ৭৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার ‘অবৈধ’ সম্পদ অর্জন ও ভোগদখল করেছেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় মামলা করেছে দুদক।

২০১৬ সালে প্রকাশিত বহুল আলোচিত পানামা পেপারসে যে বাংলাদেশিদের নাম এসেছিল, তাদের মধ্যে ছিলেন ঠিকাদারি ব্যবসায়ী মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু। অভিযোগ রয়েছে, তার মালিকানাধীন ঠিকাদারি কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ও উন্নয়নকাজের নামে ‘প্রভাব খাটিয়ে’ তিনি কোটি কোটি টাকা ‘আত্মসাৎ’ করেছেন।

সেন্ট্রাল মেডিসিন স্টোরসের (সিএমএসডি) সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদউল্লাহ মৃত্যুর আগে লিখিতভাবে সরকারকে জানিয়েছিলেন, স্বাস্থ্যখাতে কেনাকাটার অনিয়ন্ত্রিত দুর্নীতির মূল কারণ হল এই খাত ‘মিঠু চক্রের’ দখলে থাকা। ওই প্রতিবেদনের পরই রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, দুদকসহ একাধিক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয়।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2021 Skynews24.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com