মধ্যরাতে বাসায় ঢুকে ভাঙচুর ও মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) এক উপপরিদর্শককে (এসআই) সাময়িক প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সোমবার (৫ মে) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা হলেন ওসি মোক্তারুজ্জামান ও এসআই বেলাল হোসেন।
এর আগে গত ২ মে এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড.আব্দুল ওয়াদুদ। পরে গতকাল রোববার অভিযোগ পত্রটি গ্রহণ করে পুলিশ।
অভিযোগে আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, গত ২৯ এপ্রিল মধ্যরাতে কলাবাগান থানার সাব-ইন্সপেক্টর বেলালের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও ১৫ থেকে ২০ জনের একদল সন্ত্রাসী বাড়িতে জোর করে ঢুকে পড়ে। আমার ম্যানেজার ৯৯৯ এ টেলিফোন করলে শাহবাগ ও নিউমার্কেট থানার টহল টিমের ২টি গাড়ি এসে তার বাড়ির সামনে মেইন রোডে থামে। ম্যানেজার তখন দেখতে পান কলাবাগান থানার ওসি মোক্তার হোসেন নিউমার্কেট ও শাহবাগের টহল টিমকে চলে যেতে বলেন।
তখন এক ভাড়াটিয়া ও নাইট গার্ড ওই টহল টিমকে বিষয়টি জানাতে চাইলে কলাবাগান থানার ওসি তাদের দুজনকে পুলিশের গাড়িতে তোলার নির্দেশ দেন। যা তার বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ রয়েছে।
এদিকে বাড়ির মধ্যে ঢুকে কয়েকজন পুলিশ ড. আব্দুল ওয়াদুদের ঘরের তৃতীয় তলার দরজা ভাঙার চেষ্টা করে। গভীর রাতে সন্ত্রাসী তাণ্ডব ও দরজা ভাঙার শব্দে আশেপাশের লোকজনদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়। একটি দরজা ভাঙার পর দ্বিতীয় দরজা ভাঙার সময় তিনি কলাবাগান থানার ওসিকে সাহায্যের জন্য ফোন দেন। ওই সময় ওসি তাকে পুলিশের সঙ্গে বের হয়ে আসতে বলেন। সেই সঙ্গে আরও বলেন ডিবির লোক এসেছে তাদেরকে সহযোগিতা করতে।
অভিযোগে তিনি আরও বলেন, কোন উপায়ান্ত না দেখে পুলিশের সঙ্গে থানায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং দরজা খুলে দেই। কিন্তু দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে এসআই বেলাল ও মান্নান আমাকে ধাক্কা মেরে আবার ঘরের ভিতরে টেনে নেয় এবং উগ্রভাবে আমার কাছে কী কী অস্ত্র আছে তা জানতে চায়।
কিছুক্ষণ পর মান্নান নামের একজন পুলিশ সদস্য আমাকে একটু আড়ালে নিয়ে বলেন, এই মুহূর্তে ১কোটি টাকা দিতে পারলে আমার থানায় যেতে হবে না। বাড়িতে রেখে যাবে। কী মামলা হয়েছে জানতে চাইলে তারা জানায় কোন মামলা হয়নি, তারা টাকার জন্য এসেছে। যদি টাকা না দেই তাহলে আমার বিরুদ্ধে ১০টা মামলা দেওয়া হবে।
ভুক্তভোগী জানায়, উপায় না পেয়ে ২লাখ টাকা পুলিশ সদস্য বেলাল ও মান্নানের হাতে দেই। ব্যাংকিং আওয়ারের মধ্যে বাকি টাকা দেওয়ার শর্তে ৩জন সিভিল ড্রেস পরা ব্যক্তিকে আমার পাহারায় রেখে যায়। তারা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়েছে। এমনকি যাওয়ার সময় এসআই বেলাল বাড়িতে কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এরকম একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও নিয়েছে ভিডিও ধারণ করে।
ওসির এমন চাঁদাবাজি, অর্থ আদায়, ভাঙচুর, লুটপাট ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকির অভিযোগের সঠিক তদন্ত ও যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি ডিএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে ডিএমপি তাদের সাময়িক প্রত্যাহার করেন।