অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আমাদের গঠনমূলক সমালোচনা করেন, প্রশংসা করার দরকার নাই। আমরা চাই, আপনারা প্রত্যেকটা বিষয় তুলে ধরেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকতার খুবই একটা ইম্পর্টেন্ট সময় যাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়তে চাই। সেটার জন্য গতকাল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়েছে—ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে। আমরা চাচ্ছি, পুরো বাংলাদেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল এখানে কন্ট্রিবিউট করুক, বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটি এখানে কন্ট্রিবিউট করুক।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ফ্যাসিবাদ মুক্ত গণমাধ্যম চাই এর ব্যানারে ‘গণমাধ্যমের ফ্যাসিবাদী বয়ান: ফিরে দেখা ১-৩৬ জুলাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই—যেখানে ফ্যাসিবাদের বয়ান কেউ তৈরি করবে না। যে অন্ধ হয়ে তার পার্টিকে ফলো করবে না; লিডার কিলিং করছে অথচ আপনি তাকে সাপোর্ট দিচ্ছেন। এক ধরনের পলিটিকাল সেটআপ যেনো বাংলাদেশে না থাকে। আমরা সবাই মিলে এমন একটা দেশ গড়ি যেই দেশে সবার ভয়েস শোনা যায়। কেউ যাতে বলতে না পারে যে, আমি আমার কথা বলতে পারছি না। যেটা গত পনের বছরে হয়েছে। অনেক অনেক ভয়েস আমরা দেখেছি, শোনা যায়নি।
তিনি বলেন, বিগত সময়ে সাংবাদিকতায় ভয়াবহ একটা সময় গিয়েছে। আমরা সেই ভয়াবহ সময়কে দূরে ঠেলতে চাই। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। সেখানে সব ধরনের ভয়েস থাকবে। আমাকে বড় গলায় যে ক্রিটিসিজম করবে তাকেও আমরা ধারণ করতে চাই। আমরা রিকনসিলিয়েশনের (পুনর্মিলন) পথ সবার জন্য উন্মুক্ত করতে চাই। সবাই মিলে আমরা একটা ভাল বাংলাদেশ গড়তে চাই। এমন একটা বাংলাদেশ, যেখানে কোন বৈষম্য থাকবে না। যেখানে আপনি যেকোন মানুষকে ক্রিটিসাইজ করতে পারবেন, অবশ্যই সেটা এভিডেন্সসহ।
প্রেস সচিব বলেন, কেউ কোন একটা বয়ান তৈরি করবেন আর আপনার সম্পর্কে লেখা হবে না—এটা ভাববেন না। প্রত্যেকটা জিনিজ ওয়েল ডকুমেন্টেড থাকবে। আমাদের আগের জেনারেশনে আমরা এটা ফেইল করেছি। আমরা ৭৪-এর ফেমিন (দুর্ভিক্ষ) নিয়ে লিখতে আমরা ফেইল করেছি। রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার নিয়ে লিখতে আমরা ফেইল করেছি। এর আগে আমাদের প্রচুর সমস্যা ছিলো, এগুলো নিয়ে লিখতে আমরা ফেইল করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা এবার যেনো ফেইল না করি। আমরা যাতে ফেইল না করি এর মূল কারণ হচ্ছে আমাদের পরবর্তী জেনারেশন যাতে আমরা যেটা ফেইস করেছি—তারা যাতে সেটা ফেইস না করে। বাংলাদেশে যাতে এইরকম স্বৈরতন্ত্রকে লিজিটিমাইজ (বৈধতা দেওয়া) করার যে বয়ান সেটা যেন জীবনে তৈরি না হয়। যে-ই ক্ষমতায় আসুক তার হয়ে যাতে কোন সাংবাদিক দালালি করতে না পারে। এই সরকার একটা উদাহরণ তৈরি করতে চাচ্ছে। আমরা বারবার বলছি—আমাদের ভুলত্রুটি থাকলে আপনারা জোর গলায় বলেন, জোর কলমে লেখেন। সাংবাদিকতায় এটা হওয়া উচিত।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই এর মুখপাত্র প্লাবন তারিক, আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন শিশির প্রমুখ।