স্পেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কাতালোনিয়ার মাতারো শহরের একটি পাড়ায় ছবি তোলোর সময় এক শিশু সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসা করে, ‘তোমরা এখানে কেন এসেছ?’
সাংবাদিকদের একজন উত্তর দেয় ‘তুমি কী ভাবছ?’ মায়ের হাত ধরে চলে যাওয়ার সময় শিশুটি হাসতে হাসতে উত্তর, ‘লামিনের কারণে।’
সেই পাড়াটির নাম রোকাফোন্ডা। এটি মূলত এটি উদ্বাস্তু শিবির। মূল শহর থেকে বিচ্ছিন্ন এবং কলঙ্কিত পাড়া নামে পরিচিত ছিল। তবে এ পাড়াটি বিশ্ব দরবারে নতুন পরিচয় পেয়েছে ১৬ বছর বয়সী ফুটবলার লামিন ইয়ামালের কারণে।
বার্সা একাডেমি লা মাসিয়ার ফুটবলার আলো ছড়াচ্ছেন ইউরো কাপে। দেখাচ্ছেন প্রতিভার ঝলক। জাতীয় দলের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ফুটবলার হিসেবে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
রোকাফোন্ডা সম্পর্কে বয়স্ক বাসিন্দাদের যখন আশপাশের পরিস্থিতি ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয় তখন তারা ভ্রু কুঁচকে যায় তাদের। তাদের চোখে ভেসে ওঠে কলঙ্কের ছাপ। তবে এখন তারা ভালো অনুভব করছে। এবং ইয়ামালের কারণে তারা একটি আশাব্যঞ্জক ভবিষ্যতের প্রতিফলন দেখতে পান তারা।
ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে ইয়মালের দুর্দান্ত এক গোল, নির্ধারণ করে দেয় ম্যাচের ফলাফল। স্পেনকে নিয়ে যায় ফাইনালে। ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে গোল করা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে তৈরি করেন ইতিহাস।
পাড়ার রাস্তায় ইয়ামালকে খেলতে দেখা জোসে প্যালাসিও নামে এক যুবক বলেন, ‘তিনি ছোট বাচ্চাদের জন্য একজন আদর্শ। এখানকার অনেকেই তার মতো হতে চায়। সে প্রতিবেশীদের প্রতীক। সেই এই পাড়ার প্রতিনিধিত্ব করছে।’
প্যালাসিও আরও বলেন, ‘সে পুরো বিশ্বের কাছে আমাদের পরিচিত করে তুলেছে। লামিন শুধু এই পাড়ার নয় স্পেনের জন্য গর্বের উৎস।’
এ সময় প্যালাসিও আরও বলেন, ‘এটি একটি নম্র পাড়া, যেখানে অনেক সংস্কৃতি রয়েছে। তবে এটি সম্পর্কে বাইরে খারাপ কথা বলা হয়। তবে আপনি যখন এখানে থাকেন, তখন আপনি জানেন যে এটি আসলে কেমন। তার মতো একজন মহান ফুটবলারের এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। সে রাস্তায় খেলে এখন বিশ্বের সেরাদের সঙ্গে খেলতে শুরু করেছে।’
১৯৬০-এর দশকে দক্ষিণ স্পেন থেকে আসা অভিবাসীদের থাকার জন্য এই পাড়াটি তৈরি করা হয়েছিল। তারপর ১৯৯০-এর দশকে, এটি বিদেশীদের দ্বারা পূর্ণ হয়েছিল। তাদের বেশিরভাগই আফ্রিকা থেকে এসেছিল।
স্পেনের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য মতে রোকাফোন্ডার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে এখানে প্রতিটি কোণে ফুটবল রয়েছে। প্রতিবেশীরা বলছেন লামিন ইয়ামেলকে দেখাদেখি রাস্তায় আরও বেশি সংখক শিশু ফুটবল খেলা করছে।
বার্সা তারকা যেখানে বড় হয়েছেন সেখান থেকে কয়েকশ মিটার দূরে সিমেন্টের ফুটবল মাঠ রয়েছে। এই শহরে এমন একজন যুবককে খুঁজে পাওয়া কঠিন, যার সঙ্গে ইয়ামাল কখনও রাস্তায় খেলেনি বা তাকে খেলতে দেখেনি।
পার্শ্ববর্তী একটি দলের কোচ সার্জিও মার্তিনেজ জানান, ‘লামিন ফ্যাক্টর খুব ভালো হয়েছে। এখন তারা আরও বেশি অনুপ্রাণিত, তাদের আরও বেশি উৎসাহ রয়েছে। এর আগে, তারা পার্কে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ফুটবল খেলত। তবে তাকে একটি আদর্শ হিসাবে দেখে।’
লামিন ইয়ামাল রোকাফোন্ডাকে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান দিয়েছেন। এখানকার বাসিন্দাদের কাছে তিনি একজন ফুটবল খেলোয়াড়ের চেয়েও বেশি কিছু। তিনি অগ্রগতি, ভবিষ্যৎ এবং আশার প্রতীক। এর আগে সবাই লিওনেল মেসির মতো হতে চেয়েছিল। এখন, অন্তত রোকাফোন্ডায়, সবাই লামিন ইয়ামাল হতে চায়।