ছয় খাতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে ইউরোপের চার দেশ

স্কাই নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪

ছয়টি খাতে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) চারটি দেশ। ইতোমধ্যে এই চার দেশে দক্ষ কর্মী পাঠাতে রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হচ্ছে। আর এই দক্ষ কর্মী পাঠানোর সামর্থ্য অর্জনের জন্য প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশকে ৩০ লাখ ইউরোর আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে ইইউ।

কথা আছে, আগামী জুন মাসের মধ্যেই ইউরোপে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর এই রোডম্যাপ চূড়ান্ত করে পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিচ্ছে সরকার।

গত সপ্তাহে এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

প্রায় দুই বছর ধরে বৈধ পথে অভিবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর আলোচনা চলছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘রোডম্যাপ বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৩০ লাখ ইউরো সহায়তা দেবে। এটি একটি পাইলট প্রকল্প। আমরা মনে করছি এটি বাস্তবায়নের পর ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে লোক নিতে আগ্রহী হবে। সবার এখন দক্ষ শ্রমিকের সংকট রয়েছে। এখানে আধা বা অদক্ষ শ্রমিকদের স্থান নেই। আগামীতে বিশ্বে যে শ্রমিক চাহিদা তৈরি হচ্ছে সেটি দক্ষতার ওপর ভিত্তি করেই হবে।’

বৈধ পথে ইউরোপে অভিবাসনে সহায়তার জন্য ২০২১ সালে ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ নামে বিশেষায়িত কর্মসূচি শুরু করেছে ইইউ। এর আওতায় থাকা সাত দেশের মধ্যে একটি বাংলাদেশ। মূলত ইউরোপের বাইরের অংশীদার দেশগুলোর নাগরিকদের দক্ষতা অর্জন ও কাজের সুযোগ দিতেই এই কর্মসূচি নিয়েছে ইইউ।

ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ স্কিমের অধীনে ইতোমধ্যে চারটি দেশ– জার্মানি, ইতালি, গ্রিস ও রোমানিয়া বাংলাদেশ থেকে প্রাথমিকভাবে জাহাজ নির্মাণ, বস্ত্র ও তৈরি পোশাক, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, নির্মাণ খাত, পর্যটন ও কৃষি খাতে দক্ষ শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এখন বাংলাদেশ থেকে কোন প্রক্রিয়ায় লোক পাঠানো হবে, তা নিয়ে ইইউর সঙ্গে আলোচনা চলছে।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলছেন, সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশ থেকে দুটি প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠানো সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এর একটি হচ্ছে বিশেষায়িত দক্ষ কর্মী (এসএসডব্লিউ-স্পেসিফায়েড স্কিলড ওয়ার্কার) মডেল, যার মাধ্যমে জাপানে লোক পাঠানো হয়। আরেকটি হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য অনুসৃত কর্মসংস্থান অনুমোদন প্রকল্প (ইপিএস-এমপ্লয়মেন্ট পারমিট স্কিম)। ইউরোপের ক্ষেত্রে এ দুটি মডেলের ধারাবাহিকতায় একটি মডেল তৈরি করা যেতে পারে। কিংবা অতীতে হংকংয়ে যেভাবে লোক পাঠানো হয়েছে, সেটিও বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। তবে ইউরোপে যে প্রক্রিয়াতেই কর্মী পাঠানো হোক না কেন, নিয়োগের নিয়ন্ত্রণ ইউরোপের হাতেই থাকবে।

তবে দক্ষ শ্রমিকদের কোনো সনদ না থাকলে সেটি যেন তাদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, সে বিষয়ে ইইউর কাছে সম্প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। কারণ, বাংলাদেশে একাধিক বৃহৎ প্রকল্পে (মেগা প্রজেক্ট) অন্তত ৪০ হাজার শ্রমিক কাজ করেছেন এবং করছেন। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল বা এ ধরনের প্রকল্পে কাজ করার জন্য বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয় এবং সেটি তারা অর্জন করেছেন। কিন্তু তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো সনদ নেই। বাংলাদেশে প্রতি বছর চার বছরের নার্সিং কোর্স করে শ্রম বাজারে প্রবেশ করে ৩৫ হাজার স্নাতক। কিন্তু তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই। এ ধরনের দক্ষ কর্মীরা যেন বিদেশে কাজের সুযোগ পায় সেজন্য আলোচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।

মনে করা হচ্ছে, ট্যালেন্ট পার্টনারশিপের আওতায় এই চার দেশে দক্ষ কর্মী পাঠানো শুরু হলে তার ধারাবাহিকতায় ইউরোপের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি উন্নত বিশ্বেও কাজের পরিধি বাড়বে বাংলাদেশের।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2021 Skynews24.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com