মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ‘গণতন্ত্র’কে বাদ দিয়ে সরকার দেশে ‘বাকশাল-টু’ কায়েম করেছে বলে অভিযোগ করেছেন আবদুল মঈন খান।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতি সৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনের পরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ আজকে দুঃখের সঙ্গে আমাদের বলতে হচ্ছে, যে আদর্শ নিয়ে এই দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ একাত্তরে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো, যে আদর্শের জন্য যুদ্ধ করেছিলো তার নাম ছিলো গণতন্ত্র এবং তার উদ্দেশ্য ছিলো যে, বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। আজকে ৫৩ বছর অতিক্রান্ত হবার পরে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের একটি প্রশ্ন সেই গণতন্ত্র কোথায় গেলো? সেই দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি কোথায়?”
‘‘ একটি সরকার আজকে জোর করে বসে আছে যে সরকার গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না। তারা মুখে বলে গণতন্ত্র। তারা বাস্তবে করেছে একদলীয় শাসন তারা এবার করেছে বাকশাল টু। এটা আমার কথা নয় এটা বিশ্ববাসীর কথা।”
মঈন খান বলেন,‘‘আজকে আপনারা দেখেছেন কিভাবে এদেশে দূর্নীতির মাধ্যমে কত হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেয়া হয়েছে, মেগা উন্নয়নের নামে কিভাবে মেগা দুর্নীতি হয়েছে। ক্ষমতা আকড়ে ধরে রাখার জন্যে যারা বিরোধী দল তাদের বিরুদ্ধে এক লক্ষ মামলা দেয়া হয়েছে, তাদের ৫০ লক্ষ নেতা-কর্মীদের কারারুদ্ধ করা হয়েছে, তাদেরকে বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে আসামী বানানো হয়েছে।”
‘‘ এখানে যদি মানুষের ভিন্ন প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকে, এদেশে যদি মানুষের গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ না থাকে তাহলে আজকে যারা কবরে শায়িত মুক্তিযোদ্ধা তাদের কাছে প্রশ্ন কেনো তারা এদেশ স্বাধীন করেছিলেন? সেই প্রশ্নের উত্তর সরকারকে দিতে হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘যখন সেই ২৫ মার্চের কালো রাতে পাক হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের নিরহ মানুষের উপরে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো সেইদিন আজকের যে আওয়ামী লীগ যারা নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে দাবি করে, যারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তি বলে দাবি করে তারা সেইদিন কেনো পলায়নপর ভূমিকা নিয়েছিলো সেই প্রশ্নের উত্তর আওয়ামী লীগকে দিতে হবে।”
‘‘ সেই কারণে স্বাধীনতা ঝান্ডা উঁচু করে তুলে ধরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেভাবে বিদ্রোহ ঘোষণা করে পাকিস্তানের একটি প্রশিক্ষিত অত্যাচারী হায়েনার মতো সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে প্রকাশ্যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই স্বাধীনতার ঘোষণা বাংলাদেশে শুধু নয়, সেদিন ইথারে ভেসে এসেছিলো আমি মেজর জিয়া বলছি তিনি বলেছিলেন যে, আই টু হিয়ার বাই ডিক্লিয়ার ইন্ডিডেন্ডেন্স অব বাংলাদেশ। সেই কথা ইথারে ভেসে শুধু বাংলাদেশের ভেতরে নয়, সেই কথা সারা বিশ্বে প্রচারিত হয়েছিলো যার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূচিত হয়েছিল সারা বিশ্বের মানুষ জেনেছিলো যে, একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হতে যাচ্ছে।”
স্বাধীনতার ঘোষক সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। যার কথা সারা বিশ্বে প্রচার হয়েছিল। ইতিহাসের যা সত্য, তা ইতিহাস নির্ধারণ করে। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন জিয়াউর রহমান, কলকাতায় পালিয়ে যায়নি।”
সকাল ৯টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা রঙ্গিন ব্যানার-ফেষ্টুন নিয়ে মিছিল সহকারে জাতীয় স্মৃতি সৌধ প্রাঙ্গনে প্রবেশ করে। আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দ মূল বেদিতে গিয়ে দলের পক্ষ থেকে পুস্পস্ত্বক অর্পণ করে।
এ সময়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহানগর বিএনপির উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি আবু আশফাক খন্দকার, সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইয়াসীন আলী প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরে নেতা-কর্মীরা শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অপর্ণ করে।