শিরোনাম
লিলকে হারিয়ে শেষ ষোলোয় লিভারপুল বঙ্গভবন এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এখনো ‘অ্যাডমিন ক্যাডার’ হিসেবে কর্মরত সাবেক আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মা চিহ্নিত ছাত্রলীগ ক্যাডাররা এস কে সুরের গোপন ভল্টের সন্ধান বলিউড থেকে সরে দাঁড়ানোর নেপথ্যে কারণ জানালেন নার্গিস মেঘনা পেট্রোলিয়ামের দুর্নীতির মহারাজা ইনাম ইলাহী চৌধুরী লস অ্যাঞ্জেলেসে কষ্টের কথা জানান নোরা শেষ মুহূর্তে উসমান ম্যাজিক, হ্যাটট্রিক শিরোপা পিএসজির আসিফ নজরুলকে শেখ হাসিনার বিষয়ে যা বলেছিলেন খালেদা জিয়া নারী সহকর্মীকে খুন করে দেহ ২৬ টুকরো, অতঃপর…… ২৯ সেপ্টেম্বর দেখা যাবে দ্বিতীয় চাঁদ, থাকবে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত

২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়ালো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ

স্কাই নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩

ঢাকা: পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের হার। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশের আর্থিকখাতের গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি খাতেরই মন্দ ঋণের হার বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পর এবার ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অস্বাভাবিক খেলাপি ঋণ বেড়েছে। গত তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) সময়ে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা বেড়েছে প্রায়। যার ফলে এ খাতে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। আর্থিখ প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের হার মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদকৃত সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। সূত্রমতে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে মোট খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমানতের হার গিয়ে ঠেকেছে একদম নিম্নে। মূলত বিশ্বাস ও আস্থাহীনতার কারণে এ খাতে আমানত রাখছেন না গ্রাহকরা। ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় এ খাতকে খাঁদের কিনারে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশেষজ্ঞরা জানান, তারল্য সংকটের মধ্যে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। এছাড়া অনিয়মের কারণে ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ায় আমানত পেতে সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি ঋণগ্রহীতাদের ব্যবসা-বাণিজ্য খারাপ থাকার কারণে অনেকে ঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে পারেনি। তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ১৯ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এর তিন মাস আগে গত মার্চ শেষে ঋণ স্থিতি ছিল ৭১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। ওই সময়ে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ১৭ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৫ দশমিক ০৫ শতাংশ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। তবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা। গত বছরের জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ স্থিতি ছিল ৬৯ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। ওই সময়ে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ১৫ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২২ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

খেলাপি ঋণ কেন বাড়ছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যে অবস্থা তাতে অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান অবসায়ন করে দেওয়া উচিত। এসব কোম্পানিকে বিশেষ বিবেচনায় ও সুবিধায় বাঁচিয়ে রেখে কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং এরা টিকে থেকে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে গিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে আমানত গ্রহণ করছে। সেই আমানতও প্রভাবশালীদের কাছে গিয়ে খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। সে গ্রাহকও নিঃস্ব হচ্ছেন।’

এ খাতে খেলাপি ঋণ কেন বাড়ছে জানতে চাইলে আইপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপি ঋণ বাড়ার জন্য ৫ থেকে ৬টি প্রতিষ্ঠান দায়ী। এদের কারণে মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। এছাড়া ব্যাংকগুলোকে যে সুবিধা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক তা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ছিল না। এটাও একটি কারণ। তবে, দেশের ভালো প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো আছে। এরা নিয়মিত ভালো করছে। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্লোজ মনিটরিং ও ইন্সপেকশনের কারণে এ খাতের অবস্থা ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে। দেশের ব্যাংকগুলোর চেয়েও কড়াকড়ি চলছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে। যা এ খাতকে আবারো ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সাথে সর্বশেষ বৈঠকে ২ বছরের মধ্যে খেলাপি ঋণ আদায় করার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদি প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের ব্যাপারে আন্তরিক হয় তবে তা অনেক ভালো অবস্থানে নিয়ে আসবে এ খাতকে। শীর্ষ ১০ থেকে ২০ ঋণ খেলাপির কাছ থেকে যদি ঋণ আদায় করা যায় তবে এ খাতে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।’

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ বেড়েছে চলতি বছরের (এপ্রিল-জুন) প্রান্তিকে। গত বছরের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এর পরের প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) সময়ে কমেছে ৫০৬ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের (জানুয়ারি-মার্চ) প্রান্তিকে বেড়েছে ১ হাজার ৩৪ কোটি এবং (এপ্রিল-জুন) প্রান্তিকে ২ হাজার ৯৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা ছাড়ের পরও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো খেলাপি ঋণ কমাতে পারছে না। গত জুন পর্যন্ত কেউ কিস্তির অর্ধেক পরিশোধ করলে তাকে খেলাপি না করার নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নির্দেশনার ফলে খেলাপি ঋণ কমার কথা ছিল। কিন্তু উল্টো খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কায়সার হামিদ বলেন, গত অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান উভয় খাতেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে। মূলত ঋণ পরিশোধে বেশিরভাগ শিথিলতা তুলে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি খারাপ হওয়াতে অনেকে কিস্তি পরিশোধ করেনি। তাই খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জানা যায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত বেশ আগে থেকেই খারাপ অবস্থায় পড়েছে। তবে আমানতকারীর অর্থ ফেরত দিতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণে ২০১৯ সালে পিপলস লিজিং অবসায়নের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) একসময়কার নিয়ন্ত্রণে থাকা আরও তিন প্রতিষ্ঠান তথা বিআইএফসি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও এফএএস ফাইন্যান্সের নানা জালিয়াতির বিষয় সামনে আসে। তহবিল সংকট চলছে এসব প্রতিষ্ঠানে।

এদিকে দেশের ব্যাংক খাতেও খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক বেড়েছে। গত তিন মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। গত জুন শেষে দেশে ব্যাংক খাতে ঋণ ছিল ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। ওই সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয় ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, যা মোট ব্যাংকঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশই এখন খেলাপি। গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2021 Skynews24.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com