হিথ্রো-চাঙ্গি-ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরের সুবিধা থাকছে শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে

স্কাই নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় রবিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৩

ঢাকা: বিশ্বের অন্যান্য আধুনিক বিমানবন্দরের মতো হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালেও থাকছে সকল সুযোগ-সুবিধা ও যাত্রীসেবা। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের আদলে তৈরি হওয়া এ বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালটিতে যাত্রীরা পাবেন লন্ডনের হিথ্রো, তুরস্কের ইস্তাম্বুল ও জার্মানির ফ্রাঙ্কফোর্ট বিমানবন্দরের মতো সুযোগ-সুবিধা।

সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ বলছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল হবে বিশ্বের অন্যতম হাব। বছরে ২ কোটি ২০ লাখ যাত্রী এ বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, বিমানবন্দটিতে পর্যায়ক্রমে অন্তত অর্ধশত দেশের বিমান উঠানামা করবে ও ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।

যা যা থাকছে তৃতীয় টার্মিনালে
স্থান সংকুলান থেকে শুরু করে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে নতুন এই টার্মিনালে। প্রথমত তৃতীয় টার্মিনালের আয়তন বর্তমান দুই টার্মিনালের মোট আয়তনের প্রায় আড়াইগুণ। এটির আয়তন হচ্ছে দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গফুট। ৩৫০ একর জমির ওপর নির্মিত তৃতীয় টার্মিনাল ভবন দিনের বেশির ভাগ সময় সূর্যের আলোয় আলোকিত থাকবে। ফলে বিদ্যুৎ ব্যবহার হবে কম। বিশাল আয়তনের তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের চারপাশ কাচ দিয়ে ঘেরা। দেয়ালে থাকছে বাংলাদেশের ষড়ঋতুর বৈচিত্রময় ছয়টি রঙের ছটা।

এখানে একসঙ্গে থাকছে ৪০টি কেবিন এক্সরে মেশিন, ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১৬টি কনভেয়ার বেল্ট, ১১টি বডি স্ক্যানার ও টানেল। থাকবে ৫৪ হাজার বর্গমিটারের বহুতলবিশিষ্ট কার পার্কিং, নতুন ইমপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স ও ৬৩ হাজার বর্গমিটারের এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স। এ ছাড়া থাকছে রেসকিউ ও ফায়ার ফাইটিং স্টেশন এবং ৪ হাজার বর্গমিটার ইকুইপমেন্ট স্টেশন।

উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য তৈরি হচ্ছে ২৪ হাজার বর্গমিটার কানেক্টিং ট্যাক্সিওয়ে (উত্তর), ৪২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার কানেক্টিং ট্যাক্সিওয়ে (অন্যান্য) এবং ২২ হাজার বর্গমিটার র‌্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে (উত্তর) ১৯ হাজার ৫০০ বর্গমিটার র‌্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে (দক্ষিণ), ৯৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার সোল্ডার, জিএসই রোড ৮৩ হাজার ৮০০ বর্গমিটার, সার্ভিস রোড ৩৩ হাজার বর্গমিটার ও ড্রেনেজ ওয়ার্কস (বক্স কালভার্ট ও প্রোটেক্টিভ ওয়ার্কস)।

টার্মিনালের চারদিকে থাকছে নিশ্ছিদ্র সীমানাপ্রাচীর, সিকিউরিটি গেট, গার্ড রুম ও ওয়াচ টাওয়ার। এর বাইরে থাকছে ল্যান্ড সাইড, সার্ভিস রোডসহ এলিভেটেড রোড, ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ইনটেক পাওয়ার প্ল্যান্ট ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম, কার্গো কমপ্লেক্সের জন্য সিকিউরিটি ও টার্মিনাল ইকুইপমেন্ট, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম, হাইড্রেন্ট ফুয়েল সিস্টেমসহ আনুষঙ্গিক সব সুবিধা। এ ছাড়া অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে ফানেল টানেলও রাখা হয়েছে।

বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলছে, তৃতীয় টার্মিনালের ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজের মধ্যে প্রথম ধাপে চালু করা হচ্ছে ১২টি। থাকছে উড়োজাহাজ রাখার জন্য ৩৬টি পার্কিং বে। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এপ্রোনে একসঙ্গে রাখা যাবে ৩৭টি উড়োজাহাজ। বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকছে। এ ছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ থাকবে ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার।

আগমনের ক্ষেত্রে থাকছে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট ও ১৯টি চেকইন অ্যারাইভাল কাউন্টার। থাকছে ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। যেখানে এক সঙ্গে থাকবে ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিমানবন্দরের সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে তৃতীয় টার্মিনালে। এ ছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে লাগেজ হ্যান্ডিলিং করা হবে। ফলে লাগেজের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না। কোনো যাত্রী লাগেজ গ্রহণ না করলে, সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাবে লাগেজের জন্য পৃথক রুমে।

এ আই সিস্টেমের মাধ্যমে যাত্রীকে বিমানবন্দরে নির্দিষ্ট কাউন্টার ও লাইনে দাঁড়াতে রয়েছে সংকেত দেয়ার ব্যবস্থা। এর বাইরে থাকবে নবজাতক সন্তানদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার। কানেক্টিং ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষারতদের বিনোদনের ব্যবস্থা। বড় আয়তনের বিশ্বমানের ব্র্যান্ডের সমন্বয়ে ডিউটি ফ্রি শপিং জোন।

যেভাবে গড়ে উঠেছে তৃতীয় টার্মিনাল
২০১৯ এর ডিসেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। আর ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর তৃতীয় টার্মিনালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে এই বিমানবন্দর। চার বছরে নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই টার্মিনাল ভবনসহ তৃতীয় টার্মিনালের ৮৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়। স্বল্প সময়ে এবং বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে দিন-রাত এক করে কাজ করেছেন কয়েক হাজার নির্মাণ শ্রমিক থেকে শুরু করে প্রকৌশলীরা।

স্থপতি বাহারিনের নকশা
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালটি সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের আদলে গড়া। এর মূল নকশা করেছেন বিশ্বখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টের তৃতীয় টার্মিনালসহ পৃথিবীর অনেকগুলো দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নকশা এই স্থপতির হাত দিয়েই তৈরি। তার তৈরি নকশায় চীনের উহান এয়ারপোর্ট, গুয়াংজু এয়ারপোর্ট, ভারতের আহমেদাবাদ এয়ারপোর্ট, পাকিস্তানের ইসলামাবাদ এয়ারপোর্ট, ফুকুওকা এয়ারপোর্ট। এ ছাড়া মরিশাস, ফিজি, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, ব্রুনেই, কম্বোডিয়ার বিভিন্ন বিমানবন্দরের নকশা করেছেন রোহানি।

আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলোর সঙ্গে চুক্তি
তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার ও বাংলাদেশে নতুন করে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে ব্রুনাই, মরিশাস, সুইজারল্যান্ডের বিমান সংস্থাগুলো চুক্তি করেছে। ৫৪টি দেশের বিমান সংস্থা এই টার্মিনাল ব্যবহার করার জন্য ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আশা করছে, তৃতীয় টার্মিনাল বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরবে নতুন আঙ্গিকে এবং নিয়ে যাবে অনন্য উচ্চতায়। এর সূত্র ধরেই শাহজালাল হবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমান সংস্থার অন্যতম হাব।

যোগাযোগ ব্যবস্থা
মেট্রোরেল এবং এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে সরাসরি যাতে এই টার্মিনালে মানুষ আসা-যাওয়া করতে পারে সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে নির্মাণাধীন পাতাল রেল। সেই সঙ্গে থাকছে টানেলও।

নান্দনিকতায় রূপ পাওয়া তৃতীয় টার্মিনারের নির্মাতা যারা
শাহজালাল বিমান বন্দরের এই তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং কোম্পানি। এই নির্মাণ প্রতিষ্ঠনগুলোর বুর্জ খলিফার মতো বিশ্বখ্যাত টাওয়ারের নির্মাণের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস টুইন-টাওয়ার, সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জের তাদাওয়াল টাওয়ার, কোরিয়ার ইচন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, আবুধাবীতে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ লাক্সারি হসপিটাল ‘ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক’ নির্মাণ করেছে স্যামস্যাংয়ের মতো বিশ্ববিখ্যাত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2021 Skynews24.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com