বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেছেন, স্বৈরাচারী সরকার দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে দেশ চালাচ্ছে। উন্নয়নের নামে এ সরকার মেগা দুর্নীতি করছে। তারা দাবী করে তারা নাকি স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। যে সরকার গণতন্ত্র হরণ করে অলিখিত বাকশাল কায়েম করেছে, সে সরকার কোনোদিন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হতে পারে না। এ সত্য আজ শুধু দেশের ভেতরে নয়, বিশ্বের প্রতিটি মুক্তিকামী মানুষ এটা টের পেয়ে গেছে।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ফতুল্লার রগোনাথপুরে জেলা অঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন খালপাড়ের রাস্তায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে একদফা দাবিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্দা গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে এ জন সবাবেশে প্রধান অতিথি আরও বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাকে কিছুদিনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব
দিয়েছিলেন। আজ যখন সরকারের কেউ ১০ কোটি টাকা প্রকল্প নিয়ে যায়, সরকার সেটাকে বাড়িয়ে ১০০ কোটি টাকা করে নিয়ে যেতে বলে। ৫০ কোটি ভাগাভাগি হয়। এ সরকার গণতন্ত্রকে হরণ করেছে। আমাদের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই আজ নারায়ণগঞ্জের মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, আপনাদের ফতুল্লা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু পুলিশের গুলিতে চোখ হারিয়েছেন। বিএনপির কত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে। তাদের এই আত্মত্যাগ যেন বৃথা যেতে না পারে। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা ও মানুষের গণতন্ত্র রক্ষা করা। দ্রব্যমূল্যের দামে আজ মানুষের নাভিশ্বাস হয়ে গেছে। রিজার্ভ এত দ্রুত কেন কমল তার জবাব এ সরকারকে দিতে হবে। যারা সুশাসনে বিশ্বাস করে তারা এদের বিরুদ্ধে। রিজার্ভ খালি করে ওরা আইএমএফের কাছে যেতে বাধ্য হয়েছে। অর্থনীতিকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। এর জন্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা বলতাম পাকিস্তান ২২টি ধনী পরিবার সৃষ্টি করেছে। আমরা এর প্রতিবাদ করেছিলাম। এই সালামরা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক অধিকার রক্ষা করার জন্য। আওয়ামী লীগ একই কায়দায় কতগুলো পরিবার সৃষ্টি করেছে যারা মানুষের সম্পদ বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বলে বিএনপির জন্ম নাকি ক্যাটনমেন্টে। আমরা বলতে চাই, বিএনপির জন্ম ক্যান্টনমেন্টে হয়নি। আওয়ামী লীগের জন্ম তো ক্যান্টনমেন্টে হয়নি। সে ব্যাপারে আমি কথা বলব না বললে তারা লজ্জা পাবে। আওয়ামী লীগের জন্ম তো গণতান্ত্রিকভাবে হয়েছিল। কেন তারা স্বাধীনতার দুই তিন বছরের মাথায় বাকশাল কায়েম করেছিল। বিএনপি গণতন্ত্র হরণ করেনি, বরং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ডাক্তাররা বলেছে বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে হবে। সরকার মানবাধিকার ক্ষুন্ন করে তাকে আটকে রেখেছে। এর জবাব আওয়ামী লীগকে দিতে হবে। আমরা আন্দোলন করছি ক্ষমতার জন্য নয়। আমরা আন্দোলন করছি মানুষের ভোটের অধিকার গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য। আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছি। আওয়ামী লীগ ভালো কাজ করে থাকলে মানুষ তো তাদের ভোট দেবেই। স্পষ্ট করে বলতে চাই। আওয়ামী লীগ যদি মানুষের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা করে তাহলে আমরা ইতোমধ্যে দেখিয়ে দিয়েছি মানুষ আওয়ামী লীগকে ঘৃণা করে। আওয়ামী লীগ চলে যাক। তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। আওয়ামী লীগ সে নির্বাচনে বিজয়ী হলে আমিও তাদের অভিনন্দন জানাব। কিন্তু ওরা জানে ওরা কত অপকর্ম করেছে। তাই ওরা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে ভয় পায়।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, বাংলাদেশ টিকে থাকবে কিনা তা নির্ভর করে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ওপর। আমরা ঢাকা নারায়ণগঞ্জ একসঙ্গে ঘেরাও করে সরকারের পতন ঘটাবো। এখানে অনেক কুখ্যাত নেতা আছে, ২০০১ সালে পালিয়েছিল। এবার পালাবার সুযোগ পাবেন না।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, ঢাকা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, নজরুল ইসলাম আজাদ, মোস্তফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু, কাজী মনিরুজ্জামান, আজহারুল ইসলাম মান্নান, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন, মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম, রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন, আড়াইহাজার পৌরসভা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নাহিদ হাসান ভূইয়া, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি, মহানগর যুবদলের আহবায়ক মনিরুল ইসলাম সজল, সদস্য সচিব শাহেদ আহমেদ, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুর রহমান সাগর, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মাহবুবুর রহমানসহ প্রমুখ।