‘সবাই ওমিক্রনে আক্রান্ত হবে, বুস্টারেও কাজ হবে না’

স্কাই নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ‘প্রায় অপ্রতিরোধ্য’ এবং সবাই শেষপর্যন্ত এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হবে। এমনকি কোভিড-১৯ টিকার বুস্টার ডোজও ভাইরাসের এই ধরনটির ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পারবে না।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির কাছে ভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে এমন হুঁশিয়ারিই উচ্চারণ করেছেন ভারতের অন্যতম শীর্ষ একজন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ। মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

ওমিক্রন নিয়ে মারাত্মক এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা ভারতীয় এই চিকিৎসা বিশেষজ্ঞের নাম ড. জয়প্রকাশ মুলীয়িল। তিনি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্স (আইসিএমআর) এর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এপিডেমিওলজিস্টের সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইসরি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন।

তিনি বলছেন, ‘করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট প্রায় অপ্রতিরোধ্য। সকলেই এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হবেন। বুস্টার ডোজও এই সংক্রমণ আটকাতে পারবে না। সকলেই সংক্রমিত হবেন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সেটিই হচ্ছে, সেখানেও সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যর্থ হচ্ছে বুস্টার ডোজ।’

তার ভাষায়, ‘করোনা টিকার বুস্টার ডোজও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টকে আটকাতে পারবে না। টিকা নেওয়া থাকলেও সাধারণ মানুষ সংক্রমিত হবেই।’

অবশ্য করোনা মহামারি নিয়ে আশার বাণীও শুনিয়েছেন ভারতের অন্যতম শীর্ষ এই চিকিৎসা বিজ্ঞানী। টানা দুই বছর ধরে করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী দাপট দেখালেও করোনা নিয়ে আর কোনো ভয় নেই বলে মনে করেন তিনি। ড. জয়প্রকাশ মুলীয়িল বলছেন, ‘করোনা আর ভয়ংকর কোনো রোগ নয়। কারণ এর নতুন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণের গুরুতর আকার ধারণ করার সম্ভাবনা অনেক কম, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যাও অনেক কম।’

ওমিক্রনের সঙ্গে করোনার বাকি ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনা করে ভারতীয় এই মহামারি বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘আমরা বেশ অনেকটা আলাদা এক ভাইরাসের সঙ্গে লড়ছি। এটি ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় অনেক কম ভয়ানক। এছাড়া এই ভ্যারিয়েন্ট কার্যত অপ্রতিরোধ্য। ঠাণ্ডা লাগা বা সর্দি কাশির মতোই উপসর্গ দেখা যাচ্ছে ওমিক্রনের ক্ষেত্রে।’

আইসিএমআর’র এই বিশেষজ্ঞ দাবি করেন, মানবদেহের ভেতরে নিজে থেকেই তৈরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আজীবন থেকে যেতে পারে। আর সেই কারণেই বিশ্বের বাকি দেশগুলোর মতো ওমিক্রনের প্রভাব ভারতে খুব বেশি পড়েনি।

তিনি জানান, করোনার প্রথম টিকা নেওয়ার আগেই ভারতের ৮৫ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ফলে কোভিড-১৯ টিকার প্রথম ডোজ আসলে বুস্টার ডোজ হিসেবেই কাজ করেছে।

চিকিৎসক বা কোনো স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ কমিটির পক্ষ থেকেই বুস্টার ডোজ দেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘সংক্রমণের বৃদ্ধি ও অভিযোজনকে টিকার কোনো বুস্টার ডোজই রুখতে পারবে না।’

অবশ্য উপসর্গহীনদের করোনা পরীক্ষা করা নিয়েও ভিন্ন মত দেন ড. জয়প্রকাশ। তিনি বলেন, ‘মানবদেহে ভাইরাস প্রবেশের দু’দিনের মধ্যেই ভাইরাস দ্বিগুণ হয়ে যায়। তাই করোনা পরীক্ষায় সংক্রমণ ধরা পড়ার আগেই, উপসর্গহীন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিয়ে থাকেন। তাই পরীক্ষা করানো ও কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা পিছিয়ে থাকবো। তবে এটি মহামারির বিবর্তনে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না।’

করোনা টিকার বুস্টার ডোজের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই জানিয়ে ড. জয়প্রকাশের দাবি, ‘আমরা বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান বা বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে বুস্টার ডোজ দেওয়ার বিষয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়নি। আমার জানা মতে, সতর্ককতামূলক ডোজ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তবে তা বাধ্যতামূলক নয়।’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা গেছে, বহু মানুষ, বিশেষ করে ষাটোর্ধ্বরা করোনার দু’টি টিকা নেওয়ার বিষয়ে সাড়া দেয়নি।

তার মতে, আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই বুঝতে পারবো না যে, আমরা কখন ভাইরাসে আক্রান্ত হবো। প্রায় ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ তাদের করোনায় সংক্রমিত হওয়ার কথা জানতেও পারবেন না।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2021 Skynews24.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com