ঘুম কম হলে স্ট্রোক-হার্ট অ্যাটাকসহ ভয়াবহ ঝুঁকি, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

স্কাই নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
ঘুম কম হলে স্ট্রোক-হার্ট অ্যাটাকসহ ভয়াবহ ঝুঁকি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

অধিকাংশ মানুষই জানেন ঘুম কম হলে শারীরিক কোন কোন সমস্যা হয়ে থাকে। খুব সাধারণ সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে চোখের পাতা ভারী হওয়া, মনোযোগ কমে যাওয়া এবং দিনের বেলায় অতিরিক্ত হাই তোলা। কিন্তু ঘুম কম হলেও তার পরিণতি এর থেকেও খারাপ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের অভাবে স্ট্রোক, স্থূলতা ও আলঝাইমার রোগসহ অসংখ্য স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা প্রদেশের টাকসন শহরের অ্যারিজোনা কলেজ অব মেডিসিনের স্লিপ অ্যান্ড হেলথ রিসার্চ প্রোগ্রামের পরিচালক মাইকেল গ্র্যান্ডনার বলেছেন, এটি অনেকটা খাদ্যতালিকার মতোই, শরীরের প্রতিটি কোষ যেমন কোনো না কোনোভাবে খাবার থেকে উপকৃত হয়; একইভাবে ঘুমও। যা সারা শরীরের উপকার করে থাকে।

২০১৮ সালের এক গবেষণা অনুসারে, মাত্র এক রাতের ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কে বিটা অ্যামাইলয়েড প্রোটিন জমা হতে পারে। যা আলঝাইমার রোগের ঝুঁকির মূল উপাদান। আবার গবেষকরা হিপ্পোক্যাম্পাাসে এই প্রোটিনের লক্ষণ খুঁজে পেয়েছেন, যা নতুন স্মৃতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং আলঝাইমার দ্বারা আক্রান্ত ক্ষেত্রগুলোর একটি।

ঘুমের অভাবের কারণে শরীরের অতিরিক্ত ওজন হওয়ারও প্রমাণ রয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতি রাতে সাত ঘণ্টার কম ঘুমিয়ে থাকেন, তাদের গড় বডি মাস ইনডেক্স বেশি হওয়ার এবং যারা বেশি ঘুমান, তাদের তুলনায় স্বাস্থ্য বেশি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

মাইকেল গ্র্যান্ডনার বলেন, ঘুম অনেক ভূমিকা পালন করে এবং শরীরের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে জড়িত। কোষ কীভাবে শক্তি পরিচালনার জন্য গ্লুকোজ পরিবহন করে, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কীভাবে সংস্কারের জন্য টিস্যু চিনতে পারে―তা থেকে শুরু করে সবকিছুতেই ভূমিকা পালন করে ঘুম।

সাম্প্রতিক সময় ঘুমজনিত রোগকে স্বাস্থ্যগত সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। যা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকা বক্তিদের মধ্যে ঘুমের অসুখ রয়েছে, বিশেষ করে স্লিপ অ্যাপনিয়া। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রাতে ছয় ঘণ্টার কম ঘুমিয়ে থাকেন, তাদের ছয় থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমানো ব্যক্তিদের থেকে ২০ শতাংশ বেশি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি।

রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের মতে, মার্কিন প্রাপ্তবয়স্কদের এক-তৃতীয়াংশ তাদের প্রয়োজনের তুলনায় কম ঘুমান, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং বিষণ্নতার সংশ্লিষ্ট। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার কারণে গাড়ি দুর্ঘটনা ও কর্মক্ষেত্রে ভুলের সম্ভাবনা এবং মৃত্যুও হতে পারে।

মাইকেল গ্র্যান্ডনার বলেন, নিজের অজান্তেই ঘুম না হওয়ার সমস্যায় ভোগা সম্ভব। অনেক ঘুমের রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায় না এবং এ কারণে চিকিৎসাও হয় না। তবে ঘুম নিয়ে চিন্তিত হলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

ঘুমজনিত সমস্যার মধ্যে রয়েছে-

অনিদ্রা: ঘুমাতে না পারা এবং রাতভর ঘুম না হওয়া।
স্লিপ অ্যাপনিয়া: অনিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ঘুমে বাধা সৃষ্টি হওয়া।
অস্থির পা সিনড্রোম: পায়ের নিচের অংশ দুর্বল অনুভূতি বা ব্যথা।

কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি আরভিং মেডিকেল সেন্টারের স্লিপ সেন্টার অব এক্সিলেন্সের পরিচালক ম্যারি-পিয়ের সেন্ট-ওঞ্জ বলেছেন, সবসময় ঘুম না হওয়া চিকিৎসাজনিত নয়। কখনো এটি দুর্বল ঘুমের স্বাস্থ্যবিধির কারণ হতে পারে। যেমন- খারাপ অভ্যাস বা দেরিতে ঘুমাতে যাওয়া এবং অপর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস তৈরি করা।

তিনি আরও বলেন, ঘুমের সময়সূচি ঠিক রাখা এবং এই চক্র নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করা বিষয়গুলোও জরুরি। উদাহরণ, ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফোন বা কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে না থাকা। ঘুমানোর আগে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে শুধু চোখে আলো পড়ে না, বরং তা ঘুমের সংকেতকে ব্যাহত করে, কিছুটা চাপও তৈরি করে। এ অবস্থায় পরের দিনের কাজের কথা ভাবলে চিন্তায় ঘুম নাও হতে পারে। রাতে ঘুম না হওয়ার জন্য দিনের শেষ ভাগে কফি পান করাও দায়ী হতে পারে।

এদিকে ঘুমাতে সমস্যা হওয়া ব্যক্তিদের পরামর্শ জানিয়েছেন মাইকেল গ্র্যান্ডনার। তিনি ঘুমানোর আগে শরীরকে বিশ্রামের জন্য প্রস্তুত করার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি মেনে চলা, রাতে খুব বেশি না জাগা, বেশি দেরি করে না খাওয়া এবং তাৎক্ষণিক ঘুম না আসলে বিছানা থেকে উঠে কিছুক্ষণ হাঁটার পরার্শ দিয়েছেন।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2021 Skynews24.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com