ভোটপরবর্তী সহিংসতায় নিহত ৩, আহত অর্ধশতাধিক

স্কাই নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১২ নভেম্বর, ২০২১

ঢাকা : দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের পরও দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার ধামরাইয়ে সহিংসতায় দুইজন এবং শুক্রবার শেরপুরে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গোপালগঞ্জ, শেরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার রাতে ধামরাই উপজেলার কুল্লা ও সুয়াপুর ইউনিয়নে দুটি সহিংসতায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকালে শেরপুর সদরের কামারেরচর ইউনিয়নের ৬নং চরে সংঘর্ষে একজন মারা যান। এছাড়া শুক্রবার গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে কয়েকটি ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার ৮৩৫টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনী সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছে সাতজনের৷ এর মধ্যে নরসিংদীতে তিনজন, কুমিল্লায় দুজন, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে একজন করে মারা গেছেন৷ এর আগে ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম দফার ভোটে মারা যান ছয়জন৷ এরপর থেকে ভোটের মাঠের প্রচারণায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে আরও ২৪ জনের৷ সবমিলিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে৷

ধামরাইয়ে দুজন নিহত

ঢাকার ধামরাইয়ে ভোটপরবর্তী সহিংসতার বৃদ্ধসহ দুজন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার কুল্লা ও সুয়াপুর ইউনিয়নে এই দুটি সহিংসতার ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন কুল্লা ইউনিয়নের বড়াকৈর গ্রামের রিফাত রেজওয়ান রাতুল (৩৪) এবং সুয়াপুর ইউনিয়নের কুরঙ্গী গ্রামের নসুর উদ্দিন মোল্লা (৮০)।

পুলিশ দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে শুক্রবার ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

নিহত রাতুলের বাবা আব্দুর রশিদ অভিযোগ করেন, তার ছেলে ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা করেন। রাতে তাকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

রাতুলের চাচাতো ভাই টিপু মিয়া বলেন, রাতুল কুল্লা ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী কালিপদ সরকারের সমর্থক ছিলেন। নির্বাচনে দুই প্রার্থী হেরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী লুৎফর রহমান বিজয়ী হন। এতে ক্ষুব্ধ আরেক পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় রাতুল মারা যান।

ধামরাই থানার ওসি আতিকুর রহমান বলেন, সুয়াপুর ইউনিয়নে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে মারামারিতে একজন বৃদ্ধ মারা গেছেন। তবে শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। ধারণা করা হচ্ছে মারামারির সময় স্ট্রোক করে মারা গেছেন।

শেরপুরে নিহত ১, আহত ১০

শেরপুর সদরের কামারেরচর ইউনিয়নের ৬নং চরে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতায় একজন নিহত এবং ১০ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার সকালে এই ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম নয়ন মিয়া বলে জানা গেছে।

শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর আহম্মেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কাশিয়ানীতে ভোটপরবর্তী সহিংসতায় আহত ২৫

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতায় অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। শতাধিক বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

শুক্রবার সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টায় সাজাইল ইউনিয়নের নির্বাচনে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সিরাজুল ইসলামের সমর্থকরা এলাকায় একটি বিজয় মিছিল বের করে। এতে পরাজিত নৌকার প্রার্থী কাজী জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকরা হামলা চালায়। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উভয় গ্রুপের সমর্থকরা লাঠি-সোটা, ঢাল-সড়কি ও ইট-পাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে মহিলাসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত ও অর্ধশতাধিক বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি শান্ত করে।

অপর দিকে কাশিয়ানী ইউনিয়নের বুথপাশা ও পিংগুলিয়া গ্রামেও পরাজিত নৌকা ও বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া রাতইল ইউনিয়নের পাথরঘাটা ও ধানকোড়া গ্রামে নৌকা ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রাথীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ রায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবি, পুলিশ ও আর্মড ব্যাটালিয়ান সদস্যদের টহল অব্যাহত রয়েছে।

রাজবাড়ীতে আ.লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা

এদিকে রাজবাড়ী সদরের বানিবহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ মিয়াকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে তাকে গুলি করা হয়।

জানা যায়, রাতে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত হন আব্দুল লতিফ। দ্রুত উদ্ধার তাকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেলে। কিন্তু অবস্থা ভালো না হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় তার।

বানিবহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা লতিফ জানান, খবর পেয়ে পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলাবহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক নমুনা পর্যবেক্ষণ করছেন।

নির্বাচনী সহিংসতায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু

এদিকে যশোরের শার্শা উপজেলায় নির্বাচনের আগে সহিংসতায় আহত আলী ফকির (৫০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম খান জানান, বিকালে শার্শা থানা পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

আলী ফকিরের বাড়ি উপজেলার পাঁচভূলাট গ্রামে। তার বাবা মৃত ইউছুফ আলী। আলী ফকিরের বড় ছেলে আলী হোসেন জানান, গত ২৩ অক্টোবর গোগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী তবিবর রহমান মনোনয়ন নিতে সমর্থকদের নিয়ে যশোর গিয়েছিলেন। ফেরার পথে গোগা বাজারে আব্দুর রশিদ চেয়ারম্যানের সমর্থকরা তবিবর রহমানের সমর্থকদের ওপর হামলা চালালে ১২ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে আমার বাবাও ছিলেন। ওই হামলার ঘটনায় শার্শা থানায় মামলা হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

আজ সকালে আলী ফকির মারা যাওয়ায় তার বড় ছেলে বাদী হয়ে শার্শা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

সিঙ্গাইরে নৌকা প্রতীকের কর্মীর বাড়িতে আগুন

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার জামির্ত্তা ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের এক কর্মীর বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর প্রতিপক্ষ আনারস প্রতীকের লোকজন পেট্রোল দিয়ে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটায় বলে দাবি নৌকা প্রতীকের কর্মী খোকন মিয়ার।

শুক্রবার ভোরে উপজেলার জামির্ত্তা ইউনিয়নের বাউদিপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে গোয়ালঘরে থাকা দুটি গরু এবং একটি মোটরসাইকেল পুড়ে যায়।

অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে জামির্ত্তা ইউনিয়ন যুবলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও নৌকা মনোনীত প্রার্থীর কর্মী খোকন মিয়া বলেন, জামির্ত্তা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী হেরে যাওয়ার পরপরই তাকেসহ একাদিক নৌকার কর্মীকে প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকি দেন বিজয়ী আনারস প্রতীকের নেতাকর্মীরা। এরপর যে যার বাড়িতে চলে যায়। পরে ভোর পৌনে ৪টার দিকে থাকার ঘরের পাশে গবাদি পশুর থাকার ঘরে প্রতিপক্ষের লোকজন পেট্রোল দিয়ে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটায়। এসময় চোখের পলকেই পুড়ে যায় যায় গোয়াল ঘরে থাকা দুটি গরু এবং নিজের ব্যবহৃত একটি ডিসকাভার মোটরসাইকেল। এরপর প্রতিবেশীদের সহায়তায় এক ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে আধাপাকা ঘরের টিনের চালা, গরু ও মোটরসাইকেলসহ কয়েক লাখ টাকার মালামাল পুড়ে যায় বলে জানান খোকন মিয়া।

শান্তিপুর পুলিশ ফাঁড়ির তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ খালিদ মনসুর বলেন, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলমান।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2021 Skynews24.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com