ঢাকা: প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডে এবং পুনরায় চীনে চিংড়ি রপ্তানির জন্য নিবন্ধিত হয়েছে খুলনার ২৫টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। চিংড়ির নতুন বাজার পাওয়ায় রপ্তানিতে আবারও সুদিন ফিরবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
করোনা ও পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের চিংড়ি রপ্তানির মূল বাজার ইউরোপে চিংড়ি রপ্তানি ক্রমান্বয়ে কমছিল।
২০২১-২২ অর্থবছরে খুলনা অঞ্চল থেকে বাগদা ও গলদা চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে ২৪ হাজার ১০০ মেট্রিক টন। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ১৯ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন।
এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে খুলনা অঞ্চল থেকে রাশিয়ায় ৭৩১ টন ও ইউক্রেনে ১১৯ মেট্রিক টন হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়েছিল। এ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছিল ৬৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ২৬৯ টন চিংড়ি, যেখান থেকে আয় হয় ২৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দেশ দুটিতে চিংড়ি রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় চিংড়ির নতুন বাজার খুঁজছিল রপ্তানিকারক ও মৎস্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা।
অবশেষে সুখবর মিলেছে এ সেক্টরে। দেশের বাইরে নতুন বাজার খুঁজে পেয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বন্ধ হতে চলা চীনের বাজারে আবারও প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের চিংড়ি। গত আগস্ট মাসে খুলনা অঞ্চলের ২৫টি হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান চীনে চিংড়ি রপ্তানির জন্য নিবন্ধন পেয়েছে।
রপ্তানির নিবন্ধন পাওয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: জাপান ফাস্ট ট্রেড লিমিটেড, এসিআই অ্যাগ্রোলিংক লিমিটেড, মডার্ন সি ফুড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, রোজেমকো সি ফুড লিমিটেড, মেসার্স নাহার ট্রেডার্স, ক্রিসমো রোজেলা সি ফুড লিমিটেড, মোস্তফা অর্গানিক সি ফুড লিমিটেড, ব্রাইট সি ফুড লিমিটেড, এমইউ সি ফুড লিমিটেড, ছবি সি ফুড লিমিটেড, শাহনেওয়াজ সি ফুড লিমিটেড, আছিয়া সি ফুড লিমিটেড, বায়োনিক সি ফুড লিমিটেড, চালনা মেরিন সি ফুড লিমিটেড, সালাম সি ফুড লিমিটেড, এটলাস সি ফুড লিমিটেড, সি ফ্রেশ লিমিটেড, অর্গানিক শ্রিম্প এক্সপোর্ট লিমিটেড, জালালাবাদ ফ্রোজেন ফুড লিমিটেড, আলফা অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড অ্যাগ্রো এক্সপোর্ট লিমিটেড, বাগেরহাট সি ফুড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, শম্পা আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল শ্রিম্প এক্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড, ফ্রেশ ফুড লিমিটেড, ন্যাশনাল সি ফুড লিমিটেড ও সাউদার্ন ফুড লিমিটেড।
এ ছাড়া প্রথমবারের নিউজিল্যান্ডে রফতানি হতে যাচ্ছে খুলনা অঞ্চলের চিংড়ি। রপ্তানির নতুন বাজার খুঁজে পাওয়ায় চিংড়ি শিল্পে সুদিন ফিরবে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা। রপ্তানি বাজার আরও সম্প্রসারণে মৎস্য অধিদপ্তরকে আরও উদ্যোগ নেয়ার দাবি তাদের।
মডার্ন সি ফুডস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী রেজাউল ইসলাম বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এ দুই দেশে কোনো চিংড়ি রপ্তানি করা যাচ্ছিল না। পাশাপাশি ইউরোপের পুরো বাজারেই মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করায় ইউরোপের দেশগুলো থেকে চিংড়ির অর্ডার কম আসছিল। এ অবস্থায় চীনে পুনরায় প্রবেশের অনুমতি পাওয়া আমাদের জন্য দারুণ সুখবর। সরকার দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছিল, আমরাও চেষ্টা করছিলাম। আশা করছি চিংড়ি রপ্তানি শিল্পের সঙ্গে আমরা যেসব প্রতিষ্ঠান জড়িত তারা এখন ঘুরে দাঁড়াতে পারব।
সি ফুড বাইং এজেন্ট এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সুজন আহমেদ বলেন, ‘চীনে আমাদের চিংড়ি পুনরায় রপ্তানির ব্যবস্থা করা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য স্বস্তির খবর। এরই মধ্যে চীন থেকে আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ শুরু করেছে চিংড়ি নেয়ার জন্য, তাদের দামটাও বেশ ভালো।’
ইউরোপের ওপর নির্ভরশীলতা আরও কমাতে হবে উল্লেখ করে সুজন আহমেদ আরও বলেন, নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। এ জন্য মৎস্য অধিদপ্তর, ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং আমাদের সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করতে হবে। বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলোকে এ ব্যাপারে সক্রিয় করতে হবে। তারা যেন আমাদের চিংড়িকে সে দেশে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে পারে।
দেশের বাইরে বিভিন্ন সি ফুড মেলায় অংশগ্রহণসহ চিংড়ি রপ্তানির আরও নতুন বাজার খুঁজতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা লিপটন সরদার বলেন, দেশের বাইরে বিভিন্ন সময় সি ফুড মেলা হয়। এসব মেলায় অংশগ্রহণের জন্য রপ্তানিকারকদের উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। নতুন বাজার পাওয়া গেলে কয়েক বছর ধরে খুলনা অঞ্চল থেকে চিংড়ি রপ্তানির নিম্নমুখী হার কমে আসবে। আবারও ঘুরে দাঁড়াবে খুলনা অঞ্চলের চিংড়ি শিল্প।
উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ অর্থবছরে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা থেকে চিংড়ি রপ্তানি করে আয় হয়েছে প্রায় ২২ কোটি ডলার।