হৃদয় ইস্যুতে শিক্ষামন্ত্রী: আমরা বিজ্ঞানবিবর্জিত হতে পারি না

স্কাই নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২২

ঢাকা : দীপু মনি বলেন, ‘আমাদের আশপাশের দেশগুলোতে অনেক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাংলাদেশ শান্তিতে আছে। এই শান্তিটা হয়তো কারও কারও পছন্দ হচ্ছে না। প্রায়শই নানাভাবে নানা কিছু উস্‌কে দেয়ার একটা অপচেষ্টা চলছে। ‌এটি সেই অপচেষ্টার অংশ কিনা আমি জানি না।’

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত ও বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের কারাগারে যাওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেছেন, দেশের এগিয়ে যাওয়ার স্বার্থে একজন শিক্ষককে হয়রানির মধ্যে পড়া উচিত নয়।

একজন শিক্ষকের সঙ্গে কেন এমন ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা দরকার বলেও মনে করেন সরকারের এই মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত বিশ্বাস। আর বিজ্ঞানশিক্ষাকে বাদ দিয়ে দেশ এগিয়ে যেতে পারে না।’

রাজধানীর সেগুন বাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শনিবার দুপুরে স্কাউটস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন শিক্ষামন্ত্রী। অনুষ্ঠান শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

দীপু মনি বলেন, ‘আইনগত বিষয়টি দেখা হচ্ছে। আমি মনে করি, পুরো বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। বিজ্ঞানের একজন শিক্ষক বিজ্ঞান পড়াবেন। আমরা তো বিজ্ঞানবিবর্জিত হতে পারি না।

‘সবার জীবনে ধর্ম একটি বড় ভূমিকা পালন করে। ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। ধর্মশিক্ষার যদি ক্লাস হয় সেখানে শিক্ষক ধর্ম শেখাবেন। বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মের সংঘর্ষের জায়গা নেই। কোথাও যদি সংঘর্ষ হয় সেটা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা…। আসলে আমি সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ নই। তাই আমি সেটি নিয়ে মন্তব্য করতে পারি না।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘একজন শিক্ষককে তার বিষয়ে পড়ানোর জন্য নিশ্চয়ই হয়রানির মধ্যে পড়া উচিত নয়। তিনি কী বলেছেন, কীভাবে বলেছেন- এ বিষয়গুলো তদন্ত হতে পারে। কারও বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেগুলো তদন্ত হতে পারে। কিন্তু পুরো ঘটনাটি আমার কাছে মনে হয়েছে খুবই দুঃখজনক।’

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ নিয়ে দেশে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা বা ষড়যন্ত্রের বিষয়টিও উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

তিনি বলেন, ‘আমার এটাও মনে হচ্ছে যে আমাদের আশপাশে অনেকগুলো দেশ। সেখানে এখন অনেক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাংলাদেশ শান্তিতে আছে। এই শান্তিটা হয়তো কারও কারও খুব পছন্দ হচ্ছে না। এবং এখানে আমি এখন দেখছি প্রায়শই নানাভাবে নানা কিছু উস্‌কে দেয়ার একটা অপচেষ্টা চলছে। ‌এটি সেই অপচেষ্টার অংশ কিনা আমি জানি না।’

দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা এবং আগামী প্রজন্মের স্বার্থে শিক্ষা আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন দীপু মনি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে যে ধর্মীয় সম্প্রীতি রয়েছে তা বজায় রাখা আমাদের জন্য, আমাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য দরকার। একইভাবে আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষকের নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয়। কারণ আমাদেরকে শিক্ষায় এগিয়ে যেতে হলে শিক্ষককে সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা দেয়ার দরকার রয়েছে।

‘কোনোভাবেই যেন কেউ হয়রানির শিকার না হয়। কোনো ধরনের কোনো অভিযোগ আসতেই পারে। অভিযোগ এলে তা তদন্ত হবে। কিন্তু কেউ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয়। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে বিষয়টি দেখছি।’

বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের মুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে যা করণীয়, আমরা সেই চেষ্টাটি করব। সবাইকে বলব, আমাদের বোধ হয় ধৈর্য্য ধরার প্রয়োজন রয়েছে। যেকোনো ছুতোয় আমাদের শান্তি-শৃঙ্খলা, সম্প্রীতির মতো বিষয়গুলো নষ্ট হওয়ার মতো কোনো কিছু করা বা উস্‌কে দেয়া একেবারেই ঠিক নয়।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা ছাড়া আমরা এগুতে পারব না। বিজ্ঞান ছাড়া, প্রযুক্তি ছাড়া এগুতে পারব না। আমার ধর্ম আমার ব্যক্তিগত বিষয়। ধর্মীয় বোধ থেকে আমি আমার মতো করে ধর্ম পালন করব। যে যার ধর্ম পালন করবে বিশ্বাস নিয়ে, সেটি তার অধিকার। একইসঙ্গে আমাদেরকে বিজ্ঞান প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সেখানে শিক্ষকের মর্যাদা এবং নিরাপত্তার দিকটিও আমাদের দেখতে হবে।’

শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের ঘটনা ঘিরে নানা ধরনের তথ্য শিক্ষামন্ত্রী পেয়েছেন বলেও ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো বিষয় ঘটেছে। আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখছি। সেখানে নানা ধরনের সমস্যা, সংকট। সেখানে নানা বিষয় নিয়ে একজনের সঙ্গে আরেকজনের সমস্যা ব্যক্তিপর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এটি সে রকম কোনো কিছুর ফল কিনা, সেটিও আমাদের খতিয়ে দেখা দরকার।’

ঘটনার সূত্রপাত:

মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্রের ক্লাসে শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন। এ কারণে গণিত ও বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে ওই ক্লাসে পাঠানো হয়। তিনি বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে ক্লাসে আলোচনা করেন।

আলোচনার সময় গোপনে তার বক্তব্যের অডিও ধারণ করা হয়। প্রায় ১৭ মিনিটের ওই অডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় কয়েকজন ছাত্রকে বার বার ধর্মের প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করতে শোনা যায়। শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল ধর্মকে একটি ‘বিশ্বাস এবং বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।

প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিনদিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেন। তবে এর আগেই ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা জোটবদ্ধ হয়ে হৃদয় মণ্ডলের শাস্তির দাবিতে স্কুলে মিছিল বের করে।

বিদ্যালয় চত্বরের পার্শ্ববর্তী রিকাবীবাজার এলাকাতেও মিছিল হয়। প্রধান শিক্ষক বিষয়টি সদর থানা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর পর পুলিশ হৃদয় মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে।

এরপর রাতেই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আসাদ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও কোরআন অবমাননার অভিযোগ এনে হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। পরদিন পুলিশ আদালতে তোলার পর বিচারক ওই শিক্ষককে কারাগারে পাঠান।

বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয়ের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী ও সমাজবিদরা। নিজেদের অবস্থান পাল্টে হৃদয়ের মুক্তি দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2021 Skynews24.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com