অবশেষে সম্পন্ন হলো বন্দিবিনিময় চুক্তি। ইসরাইলের জেল থেকে মুক্ত বাতাসে ফিরে এসেছেন ফিলিস্তিনিরা। যুদ্ধবিরতির অংশ হিসাবে সোমবার ইসরাইলের কারাগার থেকে দুই ধাপে মুক্তি পেয়েছেন ৩,৭০০ জন ফিলিস্তিনি। তবে এখনো ইসরাইলের কারাগারে অবৈধভাবে বন্দি রয়েছেন ১১,৪৬০ জন ফিলিস্তিনি। এসব বন্দির মধ্যে অধিকৃত পশ্চিম তীরের ৪০০ ফিলিস্তিনি শিশুও রয়েছে।
মঙ্গলবার রাজনৈতিক বন্দিদের ওপর নজারদারিকারী ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এদিকে গাজা উপত্যকায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির মধ্যেই মঙ্গলবার ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরাইল।
ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সোমবার বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার পরও ইসরাইলে ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দি আছেন। তবে ইসরাইলি কারাগারে বন্দিদের ব্যাপারে ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থা এক বিবৃতিতে জানায়, অক্টোবরের হিসাবে ইসরাইলি কারা প্রশাসনের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দির সংখ্যা ১ হাজার ৪৬০ জনেরও বেশি। এছাড়া আজীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি এবং যাদের বিরুদ্ধে আজীবন কারাদণ্ডের অভিযোগ গঠন করা হয়েছে- এমন বন্দির সংখ্যা প্রায় ৩৫০ জন। এর মধ্যে ৩০৩ জন ইতোমধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত, আর ৪০ জনের বিরুদ্ধে আজীবন কারাদণ্ডের অভিযোগ গঠন প্রক্রিয়াধীন।
যুদ্ধবিরতির মধ্যেই পাঁচ ফিলিস্তিনিকে হত্যার ব্যাপারে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তাদের নির্ধারিত কথিত ‘হলুদ সীমা’ অতিক্রম করায় পাঁচ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। আইডিএফ জানিয়েছে, গাজা সিটির সেজায়া এলাকায় তাদের দিকে এগিয়ে আসে কিছু ফিলিস্তিনি। ওই সময় তাদের লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি ছোড়া হয়। এসব ফিলিস্তিনিকে ‘হুমকি’ হিসাবে উল্লেখ করেছে ইসরাইলি সেনারা। কিন্তু তাদের কাছে অস্ত্র ছিল কি না, সেটি তারা নিশ্চিত করেনি।
৩ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনির মুক্তি : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ৩ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরাইল। সোমবার দুই দফায় তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ইসরাইলের কেন্দ্রীয় কারাগার দপ্তরের জনসংযোগ বিভাগ। প্রথম ব্যাচের ১,৯৬৮ জন বন্দি ছিল ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অঞ্চলের রাজধানী রামাল্লার পশ্চিমাংশে ইসরাইলের মালিকানাধীন ‘ওফের’ কারাগারের। প্রথম ব্যাচটি পশ্চিম তীরে যাওয়ার কাছকাছি সময়ে খান ইউনিস শহরে পৌঁছান দ্বিতীয় ব্যাচের ১ হাজার ৭১৮ কারাবন্দি। তারা দক্ষিণ ইসরাইলের কারাগারে ছিলেন। ইসরাইলের কেন্দ্রীয় কারা দপ্তরের বিবৃতিতে এসব কারাবন্দি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর সেখান থেকে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের মধ্য থেকে ১ হাজার ৭১৮ জনকে মুক্তি দেওয়া হলো।
হামাস নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের জামাতার বৈঠকেই চুক্তি চূড়ান্ত হয় : প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ও তার দূত স্টিভ উইটকফ সশরীর হামাস নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। মূলত ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে হামাসের সঙ্গে তারা সরাসরি সাক্ষাৎ করেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, গত বুধবার তারা হামাস নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ইসরাইলকে সহায়তা করায় গাজায় ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড : হামলার সময় দখলদার ইসরাইলকে সহায়তা করার অপরাধে গাজায় প্রকাশ্যে ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে হামাস।
সংবাদমাধ্যম সাফাক মঙ্গলবার জানিয়েছে, একটি ফায়ারিং স্কোয়াডে এই ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।