বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিশ্বের যে কয়েকটি দেশ রয়েছে চরম ঝুঁকিতে, তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। অথচ সরকার, দাতা দেশ ও সংস্থা কর্তৃক বরাদ্দ তহবিল নিয়ে বছরের পর বছর ধরে এ খাতে চলছে প্রায় অবাধ লুটপাট, তহবিল তছরুপ, ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি সর্বোপরি স্বেচ্ছাচারিতা। টিআইবিসহ একাধিক সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদন এবং গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে বিভিন্ন সময়ে বেরিয়ে এসেছে এসব লুটপাটের ভয়াবহ চিত্র। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও লুটেরা ড. হাছান মাহমুদ পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে ভয়াবহ রকমের লুটপাট হয় জলবায়ু প্রকল্পের অর্থ। সেই ধারা শেখ হাসিনা সরকারের শেষ দিন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। টিআইবির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো কোনো জলবায়ু প্রকল্পে সর্বোচ্চ ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ আত্মসাত হয়েছে। এভাবে বিগত সময়ে হাজার কোটি টাকা সরকারি বরাদ্দের অর্থ দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা, এনজিওসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পকেটে ঢুকেছে। টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার জন্য এনজিওগুলোকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এনজিওগুলো এভাবে অগ্রিম ঘুষ দিয়ে বরাদ্দ এনে বাকি প্রায় পুরোটাই আত্মাসাত করেছে অনেক ক্ষেত্রে। এই খাতে বরাদ্দের সিংহভাগই বিদেশ থেকে নেয়া ঋণের অর্থ। যা সাধারণ জনগণের ওপর চাপছে। গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের নাগরিকদের মাথাপিছু জলবায়ু ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৯ দশমিক ৬ মার্কিন ডলার।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুতেই পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পড়ে দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের হাতে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আশা করা হয়েছিল, উপদেষ্টা রিজওয়ানা অত্যন্ত সিরিয়াস থাকবেন এ বিষয়ে। জলবায়ু প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে বিগত সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের একটা সুরাহা হবে। লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নেয়া হবে। উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে বিগত সময়ে নেয়া প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নকাজ খতিয়ে দেখা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের ইতিমধ্যে এক বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। এ সরকারের আয়ুস্কালও বলা যায় শেষ পর্যায়ে এখন। কিন্তু সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজ ও শীর্ষনিউজ ডটকমের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে খোঁজ নিতে গিয়ে অবাক হতে হয়। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে সামান্যতম পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়নি। বিশেষ বা উচ্চ পর্যায়ের কমিটির মাধ্যমে অনুসন্ধান করে লুটপাটকারীদের শাস্তির আওতায় আনাতো দূরের কথা, ইতিপূর্বে টিআইবিসহ বিভিন্ন সংস্থা জলবায়ু খাতের অর্থ লুটপাটের যেসব তথ্য উদঘাটন করেছে সেগুলোর ব্যপারেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে।
সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজ ও শীর্ষনিউজ ডটকমের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের তথ্য চাওয়া হয়েছিল। তবে মন্ত্রণালয় কিছুই দেখাতে পারেনি। উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানের সঙ্গে মুখোমুখি কথা হয়েছিল। তিনিও এ সংক্রান্ত ন্যূনতম কোনো পদক্ষেপের নজির দেখাতে পারেননি। পরে লিখিতভাবেও জানতে চাওয়া হয়েছিল। এরও জবাব দেননি উপদেষ্টা। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এসব হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে রাজি নন উপদেষ্টা। জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ দু’একজন কর্মকর্তা এ নিয়ে কথাও বলেছেন। কিন্তু উপদেষ্টার আগ্রহ না থাকায় তারা আর এ বিষয়টি তুলেননি।
জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলায় ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে তিনটি তহবিল গঠন করে সরকার। ২০০৫ সালে গঠন করা হয় ‘ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন’ (ঘঅচঅ)। এরপর ২০০৯ সালে গৃহীত হয় ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান’ (ইঈঈঝঅচ)। এই পরিকল্পনার ভিত্তিতে ২০১০ সালে গঠিত হয় ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ (ইঈঈঞঋ)। একই বছর চালু হয় ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিলিয়েন্স ফান্ড’ (ইঈঈজঋ) ও পাইলট প্রজেক্ট ফর ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স (চচঈজ)।
বিদেশি অর্থায়ন ছাড়াও সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে প্রতিবছর জলবায়ু খাতে বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ দিয়ে আসছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) জলবায়ু, পরিবেশ ও দুর্যোগ সহনশীল অবকাঠামো খাতে ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২২৮টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এসব প্রকল্পে ব্যবহৃত অর্থের উল্লেখযোগ্য অংশ বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে আসবে। বিশ্লেষকদের মতে, এই বরাদ্দ শুধু প্রকৃতি রক্ষার খাতেই সীমিত নয়, এর সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে রয়েছে টেকসই অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক জলবায়ু প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার প্রশ্ন।
কিন্তু এসব অর্থ অতীতে কী হারে লুটপাট হয়েছে এর কিছুটা চিত্র পাওয়া যায়, টিআইবিসহ বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনে। বাংলাদেশে জলবায়ু প্রকল্পের দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক অপচয় নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং ঝঙঅঝ ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন যৌথভাবে একটি গবেষণা প্রকাশ করে। গবেষণা অনুযায়ী, উপকূলীয় এলাকা বরগুনা, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালীর চারটি প্রকল্পে ১৪ থেকে ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত দুর্নীতি হয়েছে। পাশাপাশি, সাতটি প্রশমন প্রকল্পে প্রায় ৫৪.৪ শতাংশ অর্থ অপচয় বা আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়েছে। ৬৮ কোটি টাকার জলবায়ু প্রকল্পে ৩৭ কোটি টাকাই আত্মসাত হয়েছে। এছাড়া এনজিওগুলোকে ক্লাইমেট ট্রাস্ট ফান্ড থেকে অর্থ পেতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়েছে বলে গবেষণায় উল্লেখ রয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় বাঁধ নির্মাণসহ জলবায়ু অভিযোজন প্রকল্পগুলোতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে টিআইবি। গবেষণা অনুযায়ী, এসব প্রকল্পে ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে।
রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী বিবেচনায় অনুমোদন, ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল বাদ দিয়ে কম ঝুঁকির এলাকায় প্রকল্প বরাদ্দ, আদৌ কোন নজরদারি না থাকা, অনুমোদিত প্রকল্প পরিবর্তন, নিম্নমানের কাজ, অযথা মেয়াদ বাড়ানো ইত্যাদি তো আছেই। আগামীতে দেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধিসহ তীব্র খরার পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়া ও জলবায়ু বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এ্যারোনটিকস এ্যান্ড স্পেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) ও ন্যাশনাল ওসেনিক এ্যান্ড এ্যাটমোসফেরিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নোয়া) ক্লাইমেট ডাটা সেন্টার চলতি বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পূর্বাভাস দিয়েছে। সংস্থা দুটির মতে, উষ্ণমণ্ডলীয় সমুদ্রস্রোত এল নিনোর প্রভাবে এবার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তাপমাত্রা বাড়বে, যা ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা খরাকবলিত হতে পারে। ফলে পানির অভাবে কৃষি জমি ও জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাবে। ফলে ধান উৎপাদন হবে ব্যাহত। দেখা দেবে সুপেয় পানির অভাব।
বায়ুদূষণ রোধে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার তহবিল পাওয়ার পরও বাংলাদেশের বাতাসের গুণগতমান বছরের প্রায় অর্ধেক সময়েই অত্যন্ত দূষিতই থাকছে। এর কারণ কী। এতো বিশাল অর্থ পেয়েও পরিবেশ অধিদপ্তর বায়ুদূষণ রোধে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে কেন? অনেকের মতে, এই অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না। বিভিন্ন প্রকল্পের নামে অর্থের অপচয় হচ্ছে, লুটপাট হচ্ছে। এর ফলে বায়ুদূষণ রোধের পরিবর্তে অসাধু কর্মকর্তাদেরই পকেট ভারি হচ্ছে। ঢাকার পরিবেশ ও বায়ুদূষণ রোধে ২০১৭ সালে ৮০২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশে নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেস) শীর্ষক একটি প্রকল্প’ বাস্তবায়ন হয়। তবে তাতে বায়ুদূষণের কোন উন্নতি হয়নি। এই প্রকল্পের টাকা অন্য খাতে ব্যয় এবং লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ইতিপূর্বে এ প্রসঙ্গে এক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে বলেছেন, ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে সরকার আন্তরিক নয়। যেসব কারণে বায়ুদূষণ হচ্ছে তা এখন মোটামুটি চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু সরকারকে এসব বিষয়ে যথাযথ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায় না। এ বিষয়ে আইন করা হলেও তা কার্যকর হয় না। মেয়াদ উত্তীর্ণ বাস দিব্যি বায়ুদূষণ করে ঢাকার রাজপথে চলাচল করছে, দেখার কেউ নেই। অবৈধ ইটভাটা চলছে, বেআইনিভাবে বায়ুদূষণ করে নির্মাণ কাজ চলছে, কিন্তু সরকার এসব বিষয়ে উদাসীন। অথচ বৈশ্বিক তহবিল থেকে পর্যাপ্ত সহায়তা এসেছে। তারপরও বায়ুদূষণ রোধ না হওয়াতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে এই অর্থ গেল কোথায়। এ অর্থ ভিন্ন খাতে বা ভিন্ন ভাবে খরচ হয়েছে এমনটি ভাবাইতো স্বাভাবিক।
এটি ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের কথা। অর্থাৎ তাঁর তখন পরিচয় ছিল শুধুমাত্র পরিবেশবিদ, বেলার নির্বাহী। এর প্রায় ৯ মাস পরে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশ অধিদপ্তর সম্পর্কিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, পরিবেশ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইনের দুর্বলতা ও প্রয়োগের ব্যর্থতা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের অনিয়মসহ সুশাসনের সব সূচকে ঘাটতির কারণে পরিবেশ অধিদপ্তরে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ঘটেছে।
টিআইবির গবেষণায় পাওয়া তথ্য মতে, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে তদারকির সময় তদারকি কর্মকর্তা ইটিপি, কারখানার পরিবেশ, পানির মান, লাইসেন্সের কাগজপত্র, ল্যাবরেটরি রিপোর্ট, টাকার রশিদ, ছাড়পত্র নবায়ন ও মূল সার্টিফিকেট ইত্যাদি বিষয় সংশ্লিষ্ট কারখানার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সঠিকভাবে তদারকি করেন না। জরিপের আওতাভুক্ত প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিল্পকারখানায় বছরে একবারও পরিবেশ অধিদপ্তরের তদারকি হয়নি।
গবেষণায় উঠে এসেছে, জরিপকৃত শিল্প কারখানার শতকরা ৫১ ভাগ মেয়াদোত্তীর্ণ ছাড়পত্র দিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যার শতকরা ৭০ ভাগ তথ্য সংগ্রহের সময় পর্যন্ত নবায়নের জন্য আবেদনই করেনি। অন্যদিকে, দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের কোনো তালিকা না থাকায় ‘দূষণকারী কর্তৃক ক্ষতিপূরণ প্রদান’ মানদণ্ডের আলোকে জরিমানা, দণ্ড ও বাজেয়াপ্তকরণে ঘাটতি রয়েছে। দূষণকারীদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আদালতে মামলা করার পরিবর্তে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে জরিমানা নির্ধারণে অধিদপ্তর বেশি আগ্রহী বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া, জরিপের আওতাভুক্ত শতকরা ১৭ ভাগ শিল্প কারখানা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনাপত্তিপত্র না পাওয়া সত্ত্বেও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। আবাসিক এলাকায় শিল্প কারখানা স্থাপন না করার আইনি বিধান থাকলেও বেশিরভাগ শিল্প কারখানাই (৭২ শতাংশ) আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ক্ষেত্রবিশেষে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে এটি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
জরিপে শতকরা ৫১ ভাগ শিল্প কারখানায় পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। জরিপের আওতাভুক্ত শতকরা ৫৭ ভাগ শিল্পকারখানা বা প্রকল্প কোনো প্রকার পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ছাড়াই পরিবেশগত ছাড়পত্র পেয়েছে।
এ ছাড়া, অধিদপ্তরের ‘নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ’ প্রকল্পের অধীনে অযৌক্তিকভাবে একই কর্মকর্তার ১০ বারসহ ১০ বছরে মোট ২৯৩ জন কর্মকর্তার বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে ভ্রমণ বাবদ অর্থ অপচয় করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মীদের একাংশের ক্ষমতা অপব্যবহার করে এবং অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জরিমানার অর্থ মওকুফ করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের ওপর থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি এক ধরনের বিপরীতমুখী ভূমিকা পালন করছে। অর্থাৎ সর্ষের মধ্যেই ভূতের দেখা মিলছে। অনিয়ম, দুর্নীতি, অদক্ষতা ও সুশাসনের ঘাটতি দূর করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় আনা, প্রভাবশালী শিল্প কারখানার মালিকদের প্রভাব থেকে মুক্ত করে পরিবেশ অধিদপ্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে পরিবেশ দূষণ ও এর বিপর্যয় থেকে উত্তরণে ব্যর্থতার পাশাপাশি এ সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন সম্ভব হবে না।