ঘরের মাঠে পিএসজির বিপক্ষে আগের দুই দেখায় বিধ্বস্ত হয়েছিল বার্সেলোনা। দুবারই তারা হেরেছিল ৪-১ গোলের বড় ব্যবধানে। এবার শুরুতে এগিয়ে গিয়ে জয়ের আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত নিজেদের আঙিনায় ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে পারেনি স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা।
রোমাঞ্চকর ম্যাচে প্রথমার্ধেই সমতা টানার পর নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে জাল কাঁপিয়ে কাতালানদের হতাশায় ডুবিয়েছে ফরাসি জায়ান্টরা।
বুধবার (১ অক্টোবর) রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে অস্থায়ী ডেরা লুইস কম্পানিস অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের কাছে ২-১ গোলে হেরেছে বার্সা। ম্যাচের ১৯ মিনিটে ফেররান তরেস স্বাগতিকদের এগিয়ে দেওয়ার পর ৩৮ মিনিটে পিএসজিকে সমতায় ফেরান সেনি মায়ুলু। আর ৯০তম মিনিটে ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের পক্ষে জয়সূচক গোলটি করেন ফরোয়ার্ড গনসালো রামোস।
ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব প্রতিযোগিতায় ঘরের মাঠে পিএসজির বিপক্ষে এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচ হারল বার্সা। শেষবার তারা জিতেছিল আট বছর আগে, ২০১৭ সালের মার্চ মাসে। স্থায়ী ঠিকানা ক্যাম্প ন্যুতে (সংস্কার কাজ চলায় বর্তমানে বন্ধ) সেই ঐতিহাসিক ম্যাচে ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার জুনিয়রের অনন্য নৈপুণ্যে ৬-১ গোলে প্যারিসিয়ানদের উড়িয়ে দিয়েছিল দলটি।
চোটের কারণে এদিন তারকা খেলোয়াড়দের অনেককে পায়নি দুই ক্লাবই। বার্সেলোনার হয়ে খেলতে পারেননি হোয়ান গার্সিয়া, গাভি, ফারমিন লোপেজ ও রাফিনিয়া। তবে পিএসজির শক্তিক্ষয় হয়েছিল তুলনামূলক বেশি। ব্যালন ডি’অরজয়ী উসমান দেম্বেলের পাশাপাশি অনুপস্থিত ছিলেন দিজিরে দুয়ে, কাভিচা কাভারাৎস্খেলিয়া ও মার্কিনিয়োস। তবুও পূর্ণ পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়ে কোচ লুইস এনরিকের দল।
বল দখলের পাশাপাশি সুযোগ তৈরিতে এগিয়ে ছিল পিএসজি। তারা ৫৩ শতাংশ সময় বল পায়ে রেখে গোলমুখে ১৫টি শট নিয়ে সাতটি রাখে লক্ষ্যে। বিপরীতে, হান্সি ফ্লিকের শিষ্যদের গোলপোস্টে নেওয়া ১২টি শটের মধ্যে লক্ষ্যে ছিল কেবল তিনটি।
ঢিমেতালে শুরু হওয়া ম্যাচের ১৯তম মিনিটে লিড পেয়ে যায় বার্সা। ভিতিনিয়ার ভুলের সুযোগে বল পেয়ে আক্রমণে ওঠার পর ইয়ামালের বাড়ানো বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মার্কাস র্যাশফোর্ডে দারুণ ক্রস করেন ডি-বক্সে। স্লাইড করে পা ছুঁইয়ে বল জালে পাঠান ফেরান। শুরুর দিকে স্বাগতিকদের দাপট থাকলেও পিএসজি আস্তে আস্তে নিজেদের গুছিয়ে নিতে থাকে।
সেটার সুফল আসে ৩৮তম মিনিটে। নুনো মেন্দেসের চমৎকার পাস পেয়ে ডি বক্সের ভেতর থেকে বাঁ পায়ের শটে জাল খুঁজে নেন মায়ুলু। বিরতির পর প্রথম সেরা সুযোগ পায় পিএসজি। ৫৩তম মিনিটে মেন্দেসের কাছ থেকে বল পেয়ে শট নেন ইব্রাহিম বাইয়ে। অনায়াসে ফেরান বার্সেলোনা গোলরক্ষক স্ট্যান্সনি। পরের মিনিটে ব্রাডলি বারকোলার শটও একইভাবে ফেরান তিনি।
৬৫তম মিনিটে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে বার্সেলোনার দুটি শট গোলমুখ থেকে ফিরিয়ে দেন পিএসজির দুই ডিফেন্ডার। পরের মিনিটে র্যাশফোর্ডের ফ্রি কিক পাঞ্চ করে ফেরান পিএসজি গোলরক্ষক, ফিরতি বলে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ইয়ামাল। ৮৪তম মিনিটে লি ক্যাং-ইনের বাঁকানো শট দূরের পোস্টে বাধা পায়।
তিন মিনিট পর কর্নার থেকে অরক্ষিত মেন্দেস হেড করেন স্ট্যান্সনি বরাবর। নষ্ট হয় পিএসজির আরেকটি ভালো সুযোগ। এই আক্ষেপ যদিও বেশিক্ষণ বয়ে বেড়াতে হয়নি পিএসজিকে। একের পর এক আক্রমণে বার্সেলোনাকে চেপে ধরা পিএসজি এগিয়ে যায় নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে।ডি-বক্সে আশরাফ হাকিমির ক্রসে শেষ সময়ে ব্যবধান গড়ে দেন ফাঁকায় থাকা রামোস।
এই জয়ে ৩৬ দল নিয়ে আয়োজিত প্রতিযোগিতার পয়েন্ট তালিকায় তিনে উঠে এসেছে পিএসজি। তাদের মতো আরও পাঁচটি দল নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে জয়ের সুবাদে ৬ পয়েন্ট পেয়েছে। গোল পার্থক্যে তাদের (+৫) চেয়ে এগিয়ে রয়েছে শুধু রিয়াল মাদ্রিদ (+৬) ও বায়ার্ন মিউনিখ (+৬)।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে চলমান ২০২৫-২৬ মৌসুমে বার্সেলোনার এটি প্রথম হার। এতে ১৬ নম্বরে নেমে গেছে তারা। তাদের পাশাপাশি আরও ১২টি দলের নামের পাশে অর্জন ৩ পয়েন্ট।