যারা নির্বাচনে যেতে চায় না তারা শেষ পর্যন্ত বাধা দেবে: প্রধান উপদেষ্টা

স্কাই নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ঢাকা : আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে বাধা আসবে বলে সতর্ক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘যারা নির্বাচনে যেতে চায় না তারা শেষ পর্যন্ত বাধা দেবে। বাংলাদেশের সত্তাকে গড়ে তুলতে তারা বাধা দেবে। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে নির্বাচন বানচাল করার। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে, যাতে নির্বাচন না হয়।’

এগুলোর কিছু কিছু লক্ষণ এখন দেখা যাচ্ছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সামনে আরও আসবে। এ জন্য আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে।’

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাতটি রাজনৈতিক দল ও হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে এ কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ওই বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকের ব্রিফিংয়ে বৈঠকের আলোচনা তুলে ধরেন।

বৈঠকে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সাত রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বলেন, সরকারের দৃঢ়তা স্পষ্ট না হলে নির্বাচনের শঙ্কা কাটবে না। এছাড়াও নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ সবাইকে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে। বিদ্যমান ব্যবস্থার পরিবর্তন না করে নির্বাচন করলে কোনো লাভ হবে না।

বৈঠক শেষে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আচরণ কার্যক্রম ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে দৃঢ়তা এবং সমন্বয়ের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এটা দূর না হলে এবং তাদের কর্মকাণ্ডে দৃঢ়তা স্পষ্ট না হলে নির্বাচনের শঙ্কা কাটবে না। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব কমিয়ে আনার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

বলেন, নুরুল হক নুরের ওপর হামলা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তুচ্ছ ঘটনায় সংঘটিত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়হীনতার স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। নির্বাচনে অতীতে যারা খুবই সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রয়োজনে তাদের চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া যায় কিনা তা বিবেচনার অনুরোধ জানান তিনি।

মঞ্জু বলেন, লটারির মাধ্যমে কর্মকর্তাদের পোস্টিং না দিয়ে দক্ষ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিরপেক্ষ নিয়োগ নীতি অনুসরণ করা যেতে পারে। নির্বাচনী সহিংসতা রোধে জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের নিয়ে নির্বাচন সমন্বয় কমিটি গঠন করতে হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে তা রীতিমতো আতঙ্কজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মিডিয়াকে যা বলেছেন তা ভীতিকর। তিনি জিওসি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কথা বলেও সময়মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়া পান নাই। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে নির্বাচনের সময়ে সারা দেশের তিনশ আসনে হাজার হাজার কেন্দ্রের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে; সেই প্রশ্ন জন্ম নিয়েছে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরে ৫৩ বছরের নির্বাচনেও জাতীয় আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি, জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। সেই ব্যর্থ ব্যবস্থায় আবারো নির্বাচন হলে তৈরি হওয়া জঞ্জাল দূর হবে না। এই বাস্তবতায় পিআর পদ্ধতি একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে। তাই পিআর নিয়ে আলোচনা তুলতে হবে। উনারা বলেছেন যে, উনারা নোট নিয়েছেন।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেছেন ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে এ সরকার বদ্ধপরিকর। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন নির্বাচনে যেন ভয় ও চাপমুক্তভাবে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে তা নিশ্চিত করা হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে সেখানে অনেক প্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠন করা দরকার ছিল, তা হয়নি বলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন মনিটরিং করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটা সমন্বিত কমিটি গঠন করার জন্য বলেছি। এ মাসে কমিটি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আহ্বান করেছি। বিচার ও সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছি। যে সমস্ত সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়েছে কিন্তু সংবিধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করতে পারে। আর সংবিধান-সংশ্লিষ্ট যেসব বিষয়ে সকলে ঐকমত্য হয়েছে তা যেন পরবর্তী সংসদ পালনে বাধ্য থাকে এমন আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করা যেতে পারে।

সাকি বলেন, এ ছাড়া আমরা আরও বলেছি, সংস্কার যাই হোক সেটি যেন টেকসই হয়। সংসদ ছাড়া সংবিধানের মৌলিক সংস্কার সম্ভব নয় সেজন্য আমরা বলেছি আগামী নির্বাচনের নাম যেন সংবিধান সংস্কার পরিষদ নির্বাচন রাখা হয় তাহলে একইসঙ্গে সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের অনুমোদন পাবে আবার সরকার গঠন করে রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ করতে পারবে।

গণ-অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, কীভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব তা নিয়ে তারা সরকারের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। বিভিন্ন বাহিনী সরকারের প্রতি আনুগত্যশীল কিনা, অদৃশ্য সরকারের অস্তিত্ব আছে কিনা এ বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টার কাছে পরিষ্কার করতে চেয়েছেন। আমরা বলেছি- এ সরকারের বাইরে আরেকটি অদৃশ্য সরকার রয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ ভারত ও কিছু গোয়েন্দা সংস্থা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করছে। আ.লীগকে যেভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, একইভাবে জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে। শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টিকে ভর করে আবারো রাজনীতিতে ফিরে আসার ষড়যন্ত্র করছেন তা আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছি এবং আ.লীগকে যেভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেভাবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে অনুরোধ করেছি।

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য তুলে ধরে এ বিষয়ে বাধা আসবে বলে সতর্ক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে দিতে চায় না, তারা যত রকমভাবে পারবে, বাধা দেবে। বাংলাদেশের সত্তাকে গড়ে তুলতে তারা বাধা দেবে। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে নির্বাচন বানচাল করার। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে, যাতে নির্বাচন না হয়।’ এগুলোর কিছু কিছু লক্ষণ এখন দেখা যাচ্ছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সামনে আরও আসবে। এ জন্য আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে।’ সাতটি দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকের ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচিত সরকারের হাতে আমরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবো।’ এই নির্বাচন নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর, সাহস অর্জনের নির্বাচন হবে বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘নিজের ভূমিতে দেশ পরিচালনার নির্বাচন। এই নির্বাচনে অন্য কোনো দেশের থাবা মারার কোনো সুযোগ যেন না থাকে।’

প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোকে বলেছেন আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে। যারা আগে কখনো ভোট দিতে পারেননি, তাদের জন্য এই নির্বাচনে ভালো অভিজ্ঞতা দিতে হবে। আগে যারা ভোট দিতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন, তাদেরও ভালো অভিজ্ঞতা দিতে হবে। কেউ যেন বলতে না পারেন যে, ভোট দিতে দেয়া হয়নি। এই নির্বাচনের আয়োজনে প্রতি পদে বাধা আসবে উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সতর্ক করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সবার মনে দ্বন্দ্ব তৈরি করার চেষ্টা করবে। আমরা যেন সঠিক থাকি, স্থির থাকি। সবাই একসঙ্গে সহযোগিতা করি।’

এবারের নির্বাচন অনন্য নির্বাচন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘এটা অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন নয়। এটা এ দেশের সকল মানুষের, সকল রাজনৈতিক দলের নির্বাচন। আমরা এই নির্বাচন আয়োজনে আপনাদের সর্বাত্মক সমর্থন চাই।’

বৈঠকে উপদেষ্টাদের মধ্যে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফার বৈঠকে এবি পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় গণফ্রন্ট এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2021 Skynews24.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com