গাজায় কৃত্রিম দুর্ভিক্ষে আরও ১৩ মৃত্যু

স্কাই নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

গাজায় কৃত্রিম দুর্ভিক্ষে মৃত্যু বাড়ছে। বিশেষ করে বোমা হামলা বা অসুস্থতার কারণে যারা অচল হয়ে পড়েছেন, তারা ত্রাণ সংগ্রহে যেতে না পেরে অবধারিতভাবে মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছেন। এই কাতারে অন্তঃসত্ত্বা ও বয়স্করাও রয়েছেন। ত্রাণকেন্দ্রে গেলে সেখানেও বেছে বেছে হত্যা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার এক দিনে অনাহার-অপুষ্টিতে তিন শিশুসহ আরও ১৩ জনের প্রাণ গেছে। গত আগস্ট মাসে সব মিলিয়ে না খেয়ে মারা গেছেন ১৮৫ জন। গত ২৭ মের পর এ পর্যন্ত এ ধরনের মৃতের সংখ্যা ৩৬১ জন, যার মধ্যে ১৩০ শিশু রয়েছে।

ত্রাণবাহী গাড়ির প্রবেশ করতে না দেওয়া ও সরবরাহে বাধা দেওয়ায় গাজায় পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত খারাপের দিকে যাচ্ছে। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) আলজাজিরা জানায়, দুর্ভিক্ষের পাশাপাশি গাজায় ব্যাপক হামলাও চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এতে গতকাল এক দিনে আরও ৬৩ জন নিহত হয়েছেন। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। তাদের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা নারীও রয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, উপত্যকায় পাঁচ বছরের কম বয়সী ৪৩ হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। ৫৫ হাজারের বেশি অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী নারীও আছেন, যারা চরম অপুষ্টিতে ভুগছেন। দুই-তৃতীয়াংশ অন্তঃসত্ত্বা নারী রক্তাল্পতায় ভুগছেন। মা ও নবজাতকরা সবচেয়ে বেশি অপুষ্টির ঝুঁকিতে।

২০২৩ সালে ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা শুরু হলে এ পর্যন্ত ৬৩ হাজার ৫৫৭ জন নিহত হন। আহতের সংখ্যা এক লাখ ৬০ হাজার ৬৬০। জাতিসংঘ সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা মূল্যায়নবিষয়ক সংস্থা আইপিসি গত ২২ আগস্ট ঘোষণা করে, গাজা উপত্যকায় পাঁচ লাখ ১৪ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এ সংখ্যা বেড়ে ছয় লাখ ৪১ হাজারে পৌঁছাবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

গত ২৩ মাস ধরে চলা যুদ্ধে ইসরাইল গাজার মানুষের চিকিৎসা সুবিধা, স্কুল, অবকাঠামোসহ প্রায় সবকিছু ধ্বংস করেছে। সেই সঙ্গে উপত্যকায় সহায়তার প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে; খাবার নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্যবস্তু করে হত্যা করা হচ্ছে।

‘গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল’
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের সংগঠন ঘোষণা করেছে, গাজায় ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার বিবিসি জানায়, আন্তর্জাতিক গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের সংগঠন আইএজিএস গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয়, ইসরাইলের আচরণ জাতিসংঘের গণহত্যা-সংক্রান্ত কনভেনশনে বর্ণিত আইনি সংজ্ঞা পূরণ করে। তিন পৃষ্ঠার প্রস্তাবে আইএজিএস গাজায় ইসরাইলের পদক্ষেপের তালিকা তুলে ধরা হয়, যেখানে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

আইএজিএস হলো বিশ্বের বৃহত্তম পেশাদার গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের সংগঠন। এতে বেশ কয়েকজন হলোকাস্ট বিশেষজ্ঞও অন্তর্ভুক্ত আছেন। এর ৫০০ সদস্যের মধ্যে ২৮ শতাংশ ভোটে অংশ নিয়েছিলেন। যারা ভোট দিয়েছিলেন তাদের ৮৬ শতাংশ এ প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। ইসরাইলের নীতি ও কর্মকাণ্ডের সংক্ষিপ্তসার, ঘোষণাপত্রে স্বাস্থ্যসেবা, সাহায্য, শিক্ষা খাতসহ বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মী ও সুযোগ-সুবিধা উভয়ের ওপর ব্যাপক হামলার কথা এতে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রস্তাবে ইউনিসেফের তুলে ধরা ইসরাইলের হাতে গাজার ৫০ হাজার শিশু হতাহত হওয়ার বিষয়টিও রয়েছে।

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে বেলজিয়াম
বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রিভোট চলতি সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মঙ্গলবার এক্সে প্রিভোট লেখেন, ‘জাতিসংঘের অধিবেশনে বেলজিয়াম ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। সেই সঙ্গে ইসরাইল সরকারের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।’ এএফপির খবরে বলা হয়, গাজায় সংঘটিত ‘মানবিক ট্র্যাজেডির’ পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রিভোট।

এর আগে গত জুলাইয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেন, ফ্রান্স ৯ সেপ্টেম্বর থেকে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। পরে এক ডজনেরও বেশি পশ্চিমা দেশ ফিলিস্তিনের সমর্থনে এগিয়ে আসতে শুরু করে। যুক্তরাজ্যও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছে। এমনটা হলে ইসরাইলের একমাত্র সমর্থক দেশ হিসেবে অবশিষ্ট থাকবে কেবল যুক্তরাষ্ট্র।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2021 Skynews24.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com