খাদ্য সংকটে কুমিল্লার আশ্রয়কেন্দ্রের শিশুরা

স্কাই নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪

কুমিল্লায় ভয়াবহ বন্যায় ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৬৭ হাজার মানুষ। এসব মানুষদের জন্য নানা খাদ্য সহায়তা এলেও খাদ্য সংকটে রয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে থাকা শিশুরা। শুধুমাত্র শুকনো বিস্কুট, আর কলা একমাত্র ভরসা এসব শিশুদের। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি ক্ষুধার্ত অধিকাংশ শিশু।

রোববার (২৫ আগস্ট) দুপুরে কুমিল্লার বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

জেলার বুড়িচং উপজেলার ফকিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে দেখা গেছে, ওই আশ্রয়কেন্দ্রটিতে আশ্রয় নিয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। তাদের মধ্যে ১৫ জনের মতো ৫ বছরের নিচের শিশু রয়েছে। এসব শিশুরা সবসময় যে খাবারে অভ্যস্ত তারা এখন সেসব খাবার পাচ্ছে না।

উপজেলার বাকশীমুল গ্রাম থেকে বানের জলে ডুবে ওই আশ্রয়কেন্দ্রটিতে আশ্রয় নিয়েছেন মো. জসীম উদ্দিন ও জেসমিন আক্তার দম্পতি। তাদের সঙ্গে রয়েছে দুই বছরের ফুটফুটে কন্যা শিশু মরিয়ম আক্তার।

জসীম উদ্দিন ও জেসমিন আক্তার দম্পতি বলেন, মাস দুয়েক আগে মায়ের দুধ খাওয়া ছাড়ে মরিয়ম। দুই বছরের মরিয়ম ভারী কোনো খাবার খেত না। গরুর দুধ মিশিয়ে নরম ভাত কসলিয়ে দিলে খেত। এছাড়াও বুকের দুধ ছাড়ার পর থেকে গরুর দুধে অভ্যস্ত মরিয়ম।

গত দুদিন ধরে সেসব খাবারের কিছুই পাচ্ছে না সে। আশ্রয় কেন্দ্রে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে রান্না করা ভাত, তরকারি, বিস্কুট, পাউরুটি, কলা ইত্যাদি খাবার সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। এসব খাবার একেবারেই মুখে নিতে চায় না দুই বছরের এই শিশুটি।

ফলে ভিটেমাটি ছাড়া হওয়ার পর থেকেই কেমন হয়ে যাচ্ছে মরিয়ম। যেসব সংস্থা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাবার সহায়তা দিচ্ছে, তাদের খাবার তালিকায় শিশুদের খাদ্যও রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন এই দম্পতি।

ভরাসার উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ইছাপুরা এলাকার বানভাসি রুমা আক্তার ও জয়নাল আবেদীন। তাদের কোলে ১৬ মাসের পুত্র সন্তান আব্দুল্লাহ।

এই দম্পতি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আব্দুল্লাহ এখনও মায়ের দুধ খায়। তিনদিন ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠার পর থেকে বুকের দুধ একেবারেই মুখে নিতে চাচ্ছে না ছেলেটা। আশ্রয়কেন্দ্রে অপরিচিত মানুষ আর মানুষের কোলাহল থাকে সবসময়। মানুষের কারণে যত্ন করে দুধ খাওয়ানোর সঠিক পরিবেশ থাকে না।

ফলে শিশু আব্দুল্লাহর খাদ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় মা-বাবা। নিয়মমতো খাবার মুখে না নিলে পুষ্টিহীনতাসহ নানান স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা করে সরকার ও মানবিক সংগঠনগুলোর প্রতি শিশুখাদ্য সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানান এই মা-বাবা।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কুমিল্লা জেলাজুড়ে ৭১৪টি কেন্দ্রে ১৫ হাজার ৫৯ জন বিভিন্ন বয়সের শিশু আশ্রয় নিয়েছে। এসব শিশুদের মধ্যে যাদের বয়স ৩ বছরের ওপরে তাদের শুকনো বিস্কুট ও কলা খাইয়ে কোনোরকম দিন পার করা গেলেও, যাদের বয়স ১ থেকে তিন বছরের মধ্যে সেসব শিশুদের নিয়ে মহা দুঃশ্চিতায় আছেন তাদের অভিভাবকরা।

কুমিল্লা কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ূন কবির মাসউদ বলেন, স্বাভাবিক সময়েও শিশুদের খাবারের প্রতি অনেক যত্নশীল হতে হয়। বন্যা কবলিত এলাকার শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই সরকারি/বেসরকারি যারাই ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন, তারা যেন অবশ্যই শিশুখাদ্যের প্রতি মনোযোগী হন। আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ।

কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, শিশুদের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছি।

বন্যার পানি না কমার কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার মোবাইল অপারেটর কোম্পানির অসচল সাইটের (টাওয়ার) সংখ্যা আরও বেড়েছে। নোয়াখালী জেলায় অসচল সাইটের সংখ্যা বেড়েছে ৮৬টি (৭ দশমিক ৫ শতাংশ) এবং লক্ষ্মীপুর জেলার অসচল সাইটের সংখ্যা বেড়েছে ৩১টি (৪ দশমিক ৪ শতাংশ)। এই দুই জেলায় সবমিলিয়ে মোট অচল সাইটের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৯৪ এবং ৪৫টি।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে অসচল সাইটের সংখ্যা ৯৮৮ থেকে ১০০১ তে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা শতকরা হিসেবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ আগের তুলনায় মোট ০ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে।

তবে ফেনী জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় অসচল সাইটের সংখ্যা কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই জেলায় অচল সাইটের পরিমাণ ৫৯১ থেকে ৫৩৮ তে হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু ফেনী জেলার ৩টি উপজেলা পুরোপুরি পানিতে নিমজ্জিত থাকায় নেটওয়ার্কের পুনরুদ্ধার কাজ ভালোভাবে শুরু করা যায়নি।

মোবাইল অপারেটরদের গ্রিন ফিল্ড সাইটগুলো এখনও পানিতে ডুবে আছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, মূল ট্রান্সমিশন হাব সাইটগুলো তার গ্রিন ফীল্ড টাওয়ারের ওপর নির্ভর করে থাকে। গতকাল পর্যন্ত জেনারেটর দিয়ে এসব এলাকায় বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে অচল সাইটগুলো চালুর চেষ্টা করা হয়েছে।

মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল করতে সহযোগিতা করছে সেনাবাহিনী

বিটিআরসি মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল করতে ৫টি স্পিডবোট দিয়ে সার্বক্ষণিক সহায়তা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এসব স্পিডবোট ব্যবহার করে অপারেটররা টাওয়ার সচল করতে টেকনিক্যাল জনবল, নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম, জেনারেটর ও জ্বালানি পরিবহন করতে পারছেন। এক্ষেত্রে গ্রামীণফোনকে ২টি, রবিকে ২টি ও বাংলালিংককে ১টি স্পিডবোট দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে।

এছাড়া পানির উচ্চতা কমে আসলে এবং বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নেটওয়ার্ক পুনঃস্থাপন কার্যক্রম আরও দ্রুত গতিতে করা যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2021 Skynews24.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com