জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন শেখ হাসিনা: রিজভী

স্কাই নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩

ঢাকা : জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন শেখ হাসিনা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, স্বচ্ছ ভোট, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি শব্দগুলোতেই আঁতকে উঠে বিরোধীদলকে বিনাশ করতে অস্ত্র নিয়ে নেমেছে সরকারের বাহিনী। ২৮ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত সকল হত্যাকাণ্ড সরকারের মাস্টার প্ল্যান।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, গায়ের জোরে চলছে আওয়ামী দুঃশাসন। তাদের অনাচারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা মানেই রাষ্ট্রদ্রোহ। এমনই একটি পরিস্থিতি তৈরি করছেনে শেখ হাসিনা। বিরোধী দলের সমালোচনায় ভাষা প্রয়োগ করা মানেই ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে তাই বন্দুকের নল তাক করা থাকে। অংশগ্রহণকারীদের ভাগ্যে থাকে আটক বা কারাবরণের জুলুম।

তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আক্রমণ নাৎসি জার্মানির গেস্টটাপোরাই চমকে উঠবে। বিস্তৃত পরিসর জুড়ে দেশবাসী মানুষের মিছিল প্রত্যক্ষ করেছে এক মহাসমুদ্র। এই দৃশ্য সহ্য করতে পারেনি সরকারের পেটোয়া বাহিনীরা। সমাবেশের মানুষদের লক্ষ্য করে খই ফোটানোর মতো বন্দুকের গুলি ছুঁড়তে থাকে। নিহত, আহত আর গ্রেফতারের নির্বিচারে জুলুমের নারকীয় দৃশ্যের সূচনা হয়। রক্তরঞ্জিত করা হয় সমগ্র সমাবেশকে।

বিএনপির এই মুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, সরকার পতনের এক দফা দাবি মহাসমাবেশে হামলা ও দলের মহাসচিবকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা ৭২ ঘণ্টা অবরোধের আজ প্রথম দিন। শান্তিপূর্ণ এই অবরোধ কর্মসূচিতে উন্মত্ত হায়েনার মতো হামলা চালিয়েছে পুলিশ। পুলিশ কর্তৃক কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ছাত্রদল নেতা রেফায়েত উল্লাহ, কৃষকদল নেতা বিল্লাল মিয়া এবং সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার যুবদল নেতা দিলু আহমেদ জিলুকে গাড়ি চাপা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

তিনি বলেন, বিএনপির চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অস্ত্রসজ্জিত পুলিশ যে তান্ডবলীলা চালাচ্ছে, এটি কোনো সংঘর্ষ নয়, সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। লক্ষ লক্ষ গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে মুষ্টিমেয় কিছু অস্ত্রধারীর এই মানবাধিকার লঙ্ঘন দেশে-বিদেশে ধিকৃত। বিএনপির নিরস্ত্র নেতাকর্মীদের উপর পরিকল্পিত আক্রমণ চালাচ্ছে পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবির একটি উচ্ছিষ্টভোগী অংশ। আফগানিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্রের মতো নির্বিচারে ও বেপরোয়াভাবে ব্যবহার করছে বুলেটের গুলি, টিয়ার শেল, লাঠি চার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড, আর্মড ভেহিকল ও অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র।

তিনি আরও বলেন, সশস্ত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গণবিরোধী আক্রমণে যুক্ত হয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী। আওয়ামী লীগের এই দুষ্কৃতিকারীরা আঘাত করছে স্টিলের পাইপ, লাঠিসোটা, বাঁশ, স্ট্যাম্প, হকিস্টিক, কাঠ ও চাপাতি দিয়ে।যৌথভাবে আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চালিয়ে যাচ্ছে আগুন সন্ত্রাস, পুড়াচ্ছে একের পর এক যানবাহন ও স্থাপনা। তাদের লক্ষ্য সবার কাছে পরিষ্কার, নিজেরা নানা দেশবিরোধী অঘটন ঘটিয়ে তার বেনিফিশিয়ারি হিসেবে বিএনপির সকল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলার প্রহসনমূলক গ্রেফতার ও রায় নিশ্চিত করা।

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, শাসকগোষ্ঠীর হাতে চরমভাবে মানবতালঙ্ঘনের শিকার হয়েও, দেশব্যাপী রুখে দাঁড়াচ্ছে নিরস্ত্র গণতন্ত্রকামী জনগণ। খালি হাতে রাজপথে নেমে আসছে, আত্মরক্ষার চেষ্টা করছে। খুনিদের প্রতিহত করছে কখনো রাস্তায় পড়ে থাকা ইট-পাথর দিয়ে, আবার কখনোবা অসীম সাহসে আওয়ামী অপশক্তির হাতিয়ার ছিনিয়ে থেকে।প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্তে, রক্ত ও জীবন দিয়ে যাচ্ছে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কারণ, লুণ্ঠিত মানবতাকে ধারণ করেই আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি। আমাদের অহিংস ও শান্তিপূর্ণ এই সংগ্রাম প্রিয় বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। এই লড়াই ১৮ কোটি মানুষের সত্যিকার স্বাধীনতার জন্য।

সারাদেশে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা মামলার বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যনুযায়ী ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ, ২৯ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ হরতাল এবং ৩১ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ অবরোধকে কেন্দ্র করে ৪৬টির বেশি মামলায় ২২৮০ জনের অধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। এতে ৩৩৫০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন, একজন সাংবাদিকসহ আট জনের মৃত্যু হয়েছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2021 Skynews24.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com