আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তালেবানের প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন করে সংকটে পড়া আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে সহযোগিতা বাড়ানোর অঙ্গীকার এসেছে বিশ্বের প্রধান ২০টি অর্থনীতির জোট জি-২০ নেতাদের পক্ষ থেকে।
মানবিক সংকট এড়াতে আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে ৬০০ মিলিয়ন ডলার জোগানোর জন্য জাতিসংঘের আহ্বানের মধ্যেই মঙ্গলবার এ ভার্চুয়াল সম্মেলনে মিলিত হন জি-২০ নেতারা।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘির সভাপতিত্বে বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং জি-২০ জোটভুক্ত ইউরোপিয়ান দেশগুলোর নেতারা অংশ নেন।
ভার্চুয়াল এ বৈঠকে আফগান অর্থনীতিতে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি এড়াতে কোটি কোটি ডলার সহায়তা দিতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এ ছাড়া তালেবানকে স্বীকৃতি না দিয়েই আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা পাঠাতেও একমত হন জি-২০ নেতারা।
বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে আফগানিস্তানের মানুষের জন্য সাহায্য পাঠাতে হবে। ওই সহায়তা সরাসরি ক্ষমতাসীন তালেবানের কাছে যাবে না।
জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল বলেন, আফগানিস্তানকে ‘বিশৃঙ্খলতায় ডুবে’ যেতে দেওয়া ঠিক হবে না।
গত আগস্ট মাসে তালেবান কাবুলের ক্ষমতা দখলের পর মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়া আফগানিস্তানকে কিভাবে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহায়তা দেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে মঙ্গলবার জি-২০ নেতাদের ভার্চুয়াল বৈঠকে তারা একথা বলেন।
বিবিসি বলছে, আফগানিস্তানে এখন যে পরিমাণ বৈদেশিক সহায়তা যাচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সেসব অর্থ কেবল জরুরি খাবার ও ওষুধ দেওয়ার কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছে।
এদিকে আফগানিস্তান ও আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য ১১৫ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লাইন। এ ছাড়া আফগান সংকট নিরসনে জার্মানি ৬০০ মিলিয়ন ইউরো দেবে বলে জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আফগানিস্তান যদি বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে পড়ে বা দেশটির আর্থিক অবস্থা যদি ভেঙে পড়ে, তাহলে আমরা কেউই কোনো কিছুই অর্জন করতে পারবো না।’
এর আগে আফগানিস্তানের সহায়তায় গোটা বিশ্বকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সোমবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস জানিয়েছিলেন, আফগানিস্তান এখন একটি ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে।
তিনি বলেন, আফগানিস্তানে ব্যাংকগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, বহু স্থানে স্বাস্থ্য সেবা এবং অন্যান্য সেবা খাতের কর্মকাণ্ড বন্ধ রয়েছে। তার ভাষায়, আফগানিস্তানের অর্ধেক মানুষ এই সংকটের মধ্যে রয়েছেন এবং ক্রমেই তা বাড়ছে।
এ ছাড়া আফগানিস্তানের মানবিক ও আর্থসামাজিক পরিস্থিতি পতনের মুখে রয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছিলেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল।
যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর সেনা প্রত্যাহারের সুযোগে দুই দশক পর আবারও আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে কট্টর ইসলামিক গোষ্ঠী তালেবানের হাতে। গত আগস্টে কাবুলের দখল নেওয়ার পর সেপ্টেম্বরে একটি অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করেছে তারা, তবে সেই সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি পায়নি।